টক স্বাদের ছোট্ট ফল এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বড় সুযোগের বার্তা দিচ্ছে
প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০২৫, ১:০৭:০৯
টক ফলেই এখন মিষ্টি সম্ভাবনার সুবাস
কেউ হয়তো ভাবেন, লেবু শুধু স্যালাডের পাশে থাকবে, অথবা ঠান্ডায় গরম পানিতে ভাসবে। কিন্তু এই টক ফল এখন কৃষির মাঠ পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে রপ্তানি বাজারে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও বাংলাদেশের লেবুর চাহিদা বাড়ছে ক্রমশ। মৌসুমী ফল হলেও এখন বারোমাসি জাতের উন্নয়নে সারা বছরই লেবু উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বান্দরবান ও গাজীপুরে বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষে এগিয়ে আসছেন অনেক তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তা। “সঠিক জাত, প্রশিক্ষণ আর সাপোর্ট থাকলে লেবু হতে পারে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস।” —ড. আব্দুল কাইয়ুম, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী
বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের লেবু
বর্তমানে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের লেবু যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যে। গত বছরই কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রায় ৪৫ লাখ মার্কিন ডলারের লেবু রপ্তানি হয়েছে। বিশ্ববাজারে লেবুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার, যার একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি বাংলাদেশ ধরতে পারে, তা হলে নতুন রপ্তানি খাত হিসেবে দাঁড়াতে পারে লেবু।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন ব্যবস্থা, রপ্তানি গ্রেডিং, ও ঠান্ডা সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটালে দেশের লেবু চাষ আরও গতিশীল হতে পারে।
প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ আর বাজার সংযোগই ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর মতে, লেবু চাষে আধুনিক কলম পদ্ধতি, জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন জাতের বারোমাসি লেবু চাষে ঝুঁকেও কমেছে, লাভও বেড়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে যা বাজারসংযোগে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
ভবিষ্যতের বার্তা: কৃষিতেই সম্ভাবনার আলো
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতনতা ও প্রাকৃতিক খাবারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লেবুর মতো ফলের রপ্তানি সম্ভাবনাও বাড়ছে। এটি শুধু কৃষকদের আয় বাড়াবে না, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারেও যুক্ত করবে নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশের লেবু চাষ এখন আর কেবল স্থানীয় চাহিদা পূরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগ থাকলে এই ছোট ফলই হতে পারে বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নাম।
এক কথায়, টকের ভেতরেই লুকিয়ে আছে মিষ্টি বিজয়ের স্বাদ।