প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ৩:০০:০৭
বিশ্বব্যাপী নতুন ভাইরাসের আতঙ্ক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা এবং আগামী বিপর্যয়ের মুখে মানবতার প্রস্তুতি কি যথেষ্ট?
"ভবিষ্যৎ অজানা, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি নিশ্চিত হতে হবে। মহামারির ঝড় এলে আর ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।" বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মহাপরিচালক
পৃথিবীর পরবর্তী বড় শঙ্কা: মহামারির পুনরাবৃত্তি?
করোনার ধাক্কা সামলাতে না পারেই পৃথিবী ফের সংকটের মুখে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, নতুন এবং আরও শক্তিশালী ভাইরাস সামনে আসছে, যা গত মহামারির মতোই অথবা তার থেকেও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। জনবহুল শহর, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য অবকাঠামোর দুর্বলতা একযোগে এই ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
আফ্রিকার নির্দিষ্ট অঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে শুরু করে এশিয়ার বার্ড ফ্লু এবং নিপাহ ভাইরাসের তীব্রতা সব মিলিয়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এক বার্তাই দিচ্ছে: সতর্ক হওয়ার সময় এখন।
“মহামারির ঝড় থামাতে হলে প্রস্তুতি হবে প্রথম সারিতে”
বিশ্বখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ড. জেমস স্টিভেন্স বলেন, “ভাইরাসের অপ্রত্যাশিত মিউটেশন এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একটি ছোট্ট সংক্রমণও বৈশ্বিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই সব দেশকে শক্তিশালী স্বাস্থ্য অবকাঠামো, পর্যাপ্ত টিকা মজুদ এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করার জন্য জোরালো নির্দেশনা দিয়েছে। করোনাকালীন ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি না করার জন্য দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরবর্তী মহামারির জন্য ‘ওয়েক আপ কল’
আমরা শিখেছি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা একক দেশের ব্যাপার নয় এটা মানবতার সংকট। জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। উন্নত দেশগুলোকে গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে, টিকা ও চিকিৎসা সরঞ্জামে সহযোগিতা করতে হবে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো, দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি উন্নত করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।
আমাদের দায়িত্ব: সময়োপযোগী প্রস্তুতি ও ঐক্য
বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এককথায় বলছেন মহামারির ঝড় রুখতে হলে আমরা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রযুক্তি থাক, চিকিৎসাবিজ্ঞান অগ্রসর থাকুক, কিন্তু মানবতার ঐক্য না থাকলে মহামারি মোকাবেলা অসম্ভব।
আমাদের সামনে এক বার্তা আছে ‘প্রস্তুত হও, সচেতন হও, এবং একসঙ্গে থাকো।’ কারণ সময় এসে গেছে, নতুন ঝড়ের মোকাবেলায় গড়ে তুলতে হবে এক শক্তিশালী, টেকসই স্বাস্থ্যকর্তৃপক্ষ।
নতুন মহামারির আগমনকে শুধু একটা বিপদ নয়, বরং মানব সভ্যতার জন্য এক শিক্ষণীয় অধ্যায় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আর সেই শিক্ষার মন্ত্রই হচ্ছে আগাম প্রস্তুতি, বিশ্বজনীন সহযোগিতা এবং এক নতুন স্বাস্থ্য সচেতনতা।
মহামারি আমাদেরকে বারবার শিখিয়েছে প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। আজকের বিশ্ব যেখানে দ্রুত পরিবর্তনের মুখোমুখি, সেখানে অচেনা ভাইরাস আমাদেরকে অবাক করার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই প্রস্তুতি কেবল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাজ নয়, এটি আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।একজন মানুষ যেমন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে জীবন বাঁচায়, তেমনি জাতি ও বিশ্বও ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করতে হবে। একসঙ্গে না দাঁড়ালে, আগাম সতর্কতা না নিলে, আমরা আবারও হারাব জীবন, হারাব স্বপ্ন।আজ যদি আমরা প্রস্তুত হই—অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগ করি, স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করি, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াই—তাহলে আমরা ভবিষ্যতের মহামারিকে পরাস্ত করতে পারব।মহামারি কেবল রোগ নয়, এটি মানবতার পরীক্ষাও বটে। আমরা কি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব? সিদ্ধান্ত আমাদেরই হাতে।