জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসিত হলেও
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ১২:২৮:২২
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসিত হলেও, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ধীরগতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে উঠেছে প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘নীতি আছে, প্রয়োগ নেই।’
প্যারিস চুক্তি: যে অঙ্গীকারে সই করেছে বাংলাদেশ
২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তিতে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই চুক্তি অনুসারে, দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য। বাংলাদেশ তার Updated Nationally Determined Contribution (NDC) নীতিতে উল্লেখ করেছে উন্নয়ন ও শিল্পায়নের ধারায় থাকলেও দেশটি কার্বন নিঃসরণ ১৫ শতাংশ স্বেচ্ছায় এবং ৩৬ শতাংশ আন্তর্জাতিক সহায়তা পেলে কমাবে। তবে প্রশ্ন উঠছে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কতটা অগ্রসর?
আন্তর্জাতিক ফোরামে উঠেছে প্রশ্ন
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু প্রস্তুতি সম্মেলন (Petersberg Climate Dialogue)-এ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে Climate Action Tracker ও Transparency International Climate Desk। তাদের মতে, বাংলাদেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিলেও তা এখনো ‘Insufficient’ (অপ্রতুল) পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতি কোথায়?
ইতিবাচক দিক:
- বিশ্বে সর্বাধিক সংখ্যক গ্রিন ফ্যাক্টরি (৪৫০+)
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কিছু বিনিয়োগ
- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পৃথক তহবিল গঠন (Bangladesh Climate Change Trust Fund)
- দূষণকারী শিল্পে ক্লিনার প্রোডাকশন চালুর প্রচেষ্টা
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা:
- এখনও দেশের ৮৩% বিদ্যুৎ উৎপাদন জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর
- পরিবহন খাতে ই-মোবিলিটি বাস্তবায়ন গতি পাচ্ছে না
- জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বিত নয়
- শিল্প ও অবকাঠামো প্রকল্পে পরিবেশ ছাড়পত্র অনেক সময় ‘প্রাতিষ্ঠানিকতা’তেই আটকে থাকে
ড. ফারজানা ইসলাম, পরিবেশ ও জলবায়ু অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ: “বাংলাদেশ জলবায়ু আলোচনায় নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) বাস্তবায়নের জন্য নীতিনির্ধারণী সমন্বয় ও বাজেটগত অগ্রাধিকার জরুরি হয়ে পড়েছে।”
অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা বনাম আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও একটি বিষয় স্পষ্ট বড় দূষণকারী নয় হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের চরম শিকার। প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও খরা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহায়তা, তহবিল ও কার্বন ক্রেডিট পাওয়ার পথ জটিল হয়ে উঠতে পারে।
পথ কী হতে পারে?
- জাতীয় বাজেটে পরিবেশ খাতে বাস্তবিক বরাদ্দ ও অগ্রাধিকার
- NDC বাস্তবায়নের জন্য পৃথক মনিটরিং কাঠামো
- বেসরকারি খাতকে ক্লিন টেকনোলজিতে উদ্বুদ্ধকরণ
- নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কর ছাড় ও প্রণোদনা
- স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক করা