অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাপ ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতি
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ১২:১০:১২
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাপ ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতি এই দ্বন্দ্বে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশসহ বহু উন্নয়নশীল দেশ। বনভূমি হারিয়ে টেকসই উন্নয়ন কতটা সম্ভব?
উন্নয়ন বনাম প্রাকৃতিক ভারসাম্য: একটি জটিল সমীকরণ
বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট দিন দিন গভীর হচ্ছে। পৃথিবীর মোট গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে বন উজাড় ও ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের মাধ্যমে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর তথ্যমতে, ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতি মিনিটে গড়ে ১০ হেক্টর করে বনভূমি হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বনভূমি ধ্বংসের হারও বেড়েছে। উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বন কেটে রাস্তা, শিল্প এলাকা, আবাসিক এলাকা নির্মাণের ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: উন্নয়নের ছায়ায় বন সংকট
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নগরায়ণ যত দ্রুত হচ্ছে, তার সমান্তরালে কমছে প্রাকৃতিক বনভূমির পরিমাণ। বন অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট ভূমির মাত্র ১৪.১ শতাংশ বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত, যা আন্তর্জাতিক গড় (২৫%) থেকে অনেক নিচে।
উল্লেখযোগ্য বন ক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে:
- গাজীপুর ও মধুপুরে শালবন এলাকায়
- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের পাহাড়ি বনাঞ্চলে
- সুন্দরবনের আশেপাশে শিল্পায়নের নামে ভূমি পরিবর্তনে
- পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম চাষ ও খনিজ অনুসন্ধানে
বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের আগেই অনেক ক্ষেত্রে বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যা ‘Environmental Impact Assessment’ (EIA) আইন লঙ্ঘনের শামিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কাদের বলেন— “উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস করা হলে তা ক্ষণস্থায়ী অর্থনৈতিক সুবিধা আনলেও দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বনবিনাশ মানেই কার্বন সিংক ধ্বংস, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে গড় তাপমাত্রা ও মৌসুমি চক্রে।”
কার্বন নিঃসরণ ও বনভূমি: পরস্পর নির্ভর সম্পর্ক
বনভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর প্রাকৃতিক কার্বন শোষণ ব্যবস্থা বা carbon sink। গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হ্রাসে সহায়তা করে। কিন্তু বন কেটে উন্নয়ন ঘটালে সেই কার্বন শোষণের ক্ষমতা নষ্ট হয়, বরং কাঠ পোড়ানোর ফলে উল্টো CO₂ বাড়ে।
বিশ্বে প্রতি বছর বনভূমি ধ্বংস থেকেই ৫.৩ বিলিয়ন টন CO₂ নিঃসরণ হয়, যা পুরো ইউরোপের সম্মিলিত নিঃসরণের সমান।
সমাধানের দিকনির্দেশনা
1. বিকল্প ভূমি পরিকল্পনা: উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিকল্পনার স্তরেই বনভূমি রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
2. বাধ্যতামূলক পরিবেশ মূল্যায়ন (EIA) বাস্তবায়ন: প্রকল্প শুরুর আগে পরিবেশের ওপর প্রভাব পরীক্ষা ও জনপরামর্শ নিশ্চিত করা।
3. পুনর্বনায়ন নীতি: প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে গাছ কাটার সমপরিমাণ বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করা।
4. কমিউনিটি বন ব্যবস্থাপনা: স্থানীয় জনগণের মালিকানায় বন রক্ষা কার্যক্রম চালু করা।