ছোট পদক্ষেপে বড় পরিবর্তন সম্ভব জেগে উঠুন, এখনই সময়
প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০২৫, ১১:২২:৫১
আমরা কি ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্ব নিচ্ছি: এই প্রেক্ষাপটে বড় প্রশ্ন হচ্ছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কে নির্ধারণ করছে? উত্তর খুব সরল আমরাই। মানুষের কর্ম, সিদ্ধান্ত এবং দায়িত্বশীলতা নির্ধারণ করবে পৃথিবীর গতি কোন পথে যাবে। তাই আজ, এই সময়, আমাদের প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্ব পৃথিবীর ভবিষ্যৎ রক্ষা করা।
মানবসৃষ্ট দুর্যোগ: সংকটের মূল শিকড় বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ মানুষের কর্মকাণ্ড। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী অপরিকল্পিত নগরায়ন, বন উজাড়, নদী দখল ও দূষণ, গ্রীনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমন এসবই ধ্বংসের কারণ। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর গড়ে ৪৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে। এই গ্যাস ওজোন স্তর ক্ষয় করছে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। ২০২৪ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এছাড়া, বায়ু ও জলদূষণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শহরের শিশুদের ফুসফুস ঠিকভাবে বিকাশ পাচ্ছে না, গর্ভবতী নারীরা বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন, নদীগুলো বিষাক্ত হয়ে পড়ছে।
প্রকৃতির প্রতিশোধ: বিপর্যয়ের ফলাফল কী?
মানবসৃষ্ট পরিবেশগত অপরাধের ফলে আজ প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে।
বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিগত কয়েক বছরে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র সব নদীই শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য আর বর্ষায় ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। মানুষ বাসস্থান হারাচ্ছে, কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে, পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আশার আলো সুপ্রসিদ্ধ জলবায়ু বিজ্ঞানী জেমস হ্যানসেন বলেন, “এখনো সময় আছে। তবে আমাদের হাতে সময় সীমিত।”জাতিসংঘের IPCC রিপোর্ট-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি দশকেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যদি সক্রিয় জলবায়ু নীতি নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলো যদি কার্বন নিঃসরণ ৫০% কমায় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে বৈশ্বিক বিপর্যয় অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব।
আমাদের হাতেই রয়েছে সমাধান
পরিবেশ রক্ষার চাবিকাঠি আমাদের হাতেই। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা কী করতে পারি?
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে করণীয়:
বৈশ্বিক পর্যায়ে করণীয়:
পরিবেশ রক্ষায় যুবসমাজের ভূমিকা: ১৮–৪০ বছর বয়সী তরুণ সমাজই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। তারা শুধু ভুক্তভোগী নয়, বরং চেইঞ্জমেকার। পরিবেশ আন্দোলনে, পরিবেশ সাংবাদিকতায়, সবুজ উদ্যোক্তা হিসেবে কিংবা সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনে তারা ভূমিকা রাখতে পারে। আজকের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যদি পরিবেশ নিয়ে সচেতন হয়, তবে আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশ একটি পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। জলবায়ু সংকট ভবিষ্যতের নয়, বর্তমানের সমস্যা। পৃথিবী আমাদের পরিচয়, আমাদের ঘর, আমাদের জীবন। যদি আজ আমরা পরিবর্তন না আনি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে এটা শুধু একটি বাক্য নয়, এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্বের সংজ্ঞা। আমরা যদি আজ জেগে উঠি, সচেতন হই, তবে হয়তো পৃথিবী আবারও হাসবে। নীল আকাশ, সবুজ বন, নির্মল বাতাস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা হয়ে উঠবে। সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। এখনই পদক্ষেপ নিন, কারণ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আপনার হাতেই।