পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ার দাবি বাড়লেও বাস্তবে কয়লা
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৪:৩৬:৪২
পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ার দাবি বাড়লেও বাস্তবে কয়লা, গ্যাস ও ফার্নেস অয়েল এখনো শিল্প খাতে শক্তির মূল উৎস। কার্বনমুক্ত প্রযুক্তি কি কেবল উচ্চাকাঙ্ক্ষার গল্প, নাকি বাস্তবায়নযোগ্য একটি ভবিষ্যৎ?
কার্বনমুক্ত শিল্প: আদর্শ না বাস্তবতা?
বিশ্বব্যাপী শিল্প খাত কার্বন নিঃসরণের অন্যতম প্রধান উৎস। International Energy Agency (IEA)-র মতে, বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন নিঃসরণের ২৪% আসে শিল্প খাত থেকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পোশাক, টেক্সটাইল, সিমেন্ট, ইস্পাত ও কেমিক্যাল শিল্পে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এই শিল্পগুলোর ৮৫% এখনো কয়লা, গ্যাস ও ডিজেলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্বনমুক্ত বা "net-zero emission" প্রযুক্তির দাবিও জোরালো হচ্ছে। প্রশ্ন হলো এই প্রযুক্তি বাস্তবে কতটা ব্যবহারযোগ্য?
কার্বনমুক্ত প্রযুক্তি: কী কী রয়েছে বাজারে?
1. ইলেকট্রিক বয়লার ও ইন্ডাকশন হিটিং সিস্টেম: প্রথাগত বয়লারের বদলে বিদ্যুৎচালিত বয়লার ব্যবহারে ৭০% পর্যন্ত কার্বন কমানো সম্ভব।
2. ভ্যাকুয়াম ড্রায়ার ও হিট রিকভারি সিস্টেম: টেক্সটাইল ও খাদ্যশিল্পে ব্যবহৃত এই প্রযুক্তি ৩০–৪০% জ্বালানি সাশ্রয় করে।
3. সৌর বাষ্প উৎপাদন ইউনিট (Solar Steam Technology): কেমিক্যাল ও প্রসেসিং শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী, তবে শুষ্ক ও খোলা পরিবেশ দরকার।
4. হাইড্রোজেন জ্বালানি ভিত্তিক উৎপাদন: এখনো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। ব্যয়বহুল এবং উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর।
বাধা কোথায়?
- প্রযুক্তির উচ্চমূল্য: কার্বনমুক্ত প্রযুক্তি এখনো তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ মেয়াদে রিটার্ন নিশ্চিত নয়।
- বিদ্যুৎ সরবরাহের অনিশ্চয়তা: ইলেকট্রিক প্রযুক্তিতে শিফট করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য।
- কর্মীদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব: নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে শ্রমিক ও অপারেটর পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
- নীতিগত অনুপ্রেরণা অনুপস্থিত: শিল্প নীতিতে এখনও ‘গ্রিন শিফটিং’ বাধ্যতামূলক নয়, প্রণোদনা সীমিত।
ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ, এনার্জি কনসালটেন্ট বলেন “বাংলাদেশে কারখানার মালিকরা শুধু উৎপাদন সক্ষমতা দেখছেন, পরিবেশ কিংবা ভবিষ্যতের ঝুঁকি নয়। কার্বনমুক্ত প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন শিল্প-নীতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির অ্যাক্সেসযোগ্যতা নিশ্চিত করা।”
সম্ভাবনা কোথায়?
- সবুজ কারখানা (Green Factory) উদ্যোগ: বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক লিড-সার্টিফায়েড গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে (৪৫০+), যা প্রমাণ করে সঠিক
নীতিতে রূপান্তর সম্ভব।
- আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা: ইউরোপ ও আমেরিকায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, যা বাংলাদেশের শিল্পকে পুনর্বিন্যাসে বাধ্য করছে।
- বিনিয়োগের নতুন সুযোগ: Green Climate Fund ও Clean Technology Funds-এর মাধ্যমে নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে বৈদেশিক সহায়তার সুযোগ রয়েছে।
করণীয় ও নীতিগত সুপারিশ
- শিল্প নীতিতে ‘কার্বন নিউট্রাল টার্গেট’ যুক্ত করা
- কার্বনমুক্ত প্রযুক্তি আমদানিতে শুল্ক ছাড়
- গ্রিন টেক ব্যবহারকারী শিল্পের জন্য কর অবকাশ
- প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও গবেষণায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়