নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের বিস্তৃতি আশাব্যঞ্জক হলেও, সামগ্রিক কার
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৪:২৮:০৫
নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের বিস্তৃতি আশাব্যঞ্জক হলেও, সামগ্রিক কার্বন নিঃসরণে তেমন পরিবর্তন আসছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল সমস্যা প্রযুক্তি-পরিকাঠামো ও নীতিগত অসঙ্গতিতে।
সবুজ শক্তির প্রসার, কিন্তু নিঃসরণ কেন অপরিবর্তিত?
বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্তত ১০ শতাংশ সোলার, বায়ু ও অন্যান্য সবুজ উৎস থেকে নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুমিল্লা, টেকনাফ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে গ্রিড-সংযুক্ত সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সোলার বিদ্যুতের ইনস্টলড ক্ষমতা প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে ১২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান প্রশ্ন তোলে এই ‘সবুজ বিনিয়োগ’ আসলে কতটা কার্যকর?
মূল কারণগুলো কী? নীতিগত ও কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ
১. সোলার প্রকল্প উৎপাদনমুখী, প্রতিস্থাপনমুখী নয়: বিভিন্ন প্রকল্পে সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও বিদ্যমান জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু থাকায় সোলার বিদ্যুৎ শুধুই ‘অতিরিক্ত’ হয়ে থাকছে। কয়লা বা গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলো বন্ধ না হলে সোলার বিদ্যুৎ কার্বন হ্রাসে বাস্তব অবদান রাখতে পারছে না।
২. গ্রিড সংযোগ ও সংরক্ষণের ঘাটতি: দেশে এখনো ‘স্মার্ট গ্রিড’ বা Grid Modernization হয়নি। ফলে উৎপাদিত সোলার বিদ্যুৎ অনেক সময় ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাটারি সংরক্ষণ ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক প্রকল্প আংশিকভাবে বন্ধ থাকছে বা সর্বোচ্চ ক্ষমতায় চলছে না।
৩. নিরাপত্তাহীন বিনিয়োগ ও বেসরকারি অংশগ্রহণের অভাব: পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা না থাকায় বেসরকারি খাতে ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবেশ সীমিত। Net Metering নীতিমালাও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর অনীহার কারণে কার্যকর হয়নি।
৪. উৎপাদন বনাম ব্যবহারের ব্যবধান: বাংলাদেশের দৈনিক বেইজলোড বিদ্যুতের প্রায় ৮৩ শতাংশ এখনো আসে গ্যাস, তেল ও কয়লা থেকে। সোলার বিদ্যুৎ এখনো রাতে বা মেঘলা আবহাওয়ায় সহায়ক নয়, তাই বেইজলোড নির্ভরতা কমছে না।
ড. মাহমুদুল হাসান, জ্বালানি ও পরিবেশনীতি বিশ্লেষক বলেন,: “সোলার প্রকল্প শুধু সংখ্যা বা মেগাওয়াট বাড়ালেই চলবে না, বরং প্রয়োজন সেই বিদ্যুতের কার্যকর ব্যবহার ও জীবাশ্ম জ্বালানির বদলি হিসেবে প্রতিস্থাপন নিশ্চিত করা।” তিনি আরও বলেন, “সঠিক নীতিমালা ও প্রযুক্তি না থাকলে সোলার প্রসার কেবলমাত্র ‘সবুজ প্রদর্শনী’তে পরিণত হবে।”
ভবিষ্যৎ করণীয়
- সোলার বিদ্যুৎ জাতীয় বেইজলোড পরিকল্পনায় যুক্ত করা
- Grid Infrastructure উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি
- কার্বন নির্গমন ভিত্তিক বিদ্যুৎ সাবসিডি পুনর্গঠন
- প্রতি জেলায় ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রণোদনা
- স্মার্ট গ্রিড ও ব্যাটারি স্টোরেজ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন