নতুন নির্মাতাদের গল্প ব্যবহার করে পুরোনো নির্মাতার ছবি?
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ১২:৫০:৩৪
অভিযোগকারী নির্মাতা রাফিদ আহসান, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তাঁর দাবি, ২০২৪ সালের শুরুতে তিনি একটি মৌলিক চিত্রনাট্য “ছায়ার গল্প” নিয়ে কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু পরে দেখতে পান, একজন প্রবীণ নির্মাতা তাঁর গল্প ‘প্রায় হুবহু’ ব্যবহার করে একটি নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করেছেন।
‘গল্পটা আমার, অথচ ক্যামেরার পেছনে আমি নেই’ রাফিদের ক্ষোভ: রাফিদ বলেন, “আমি আমার গল্প কাউকে বিক্রি করিনি, শুধু পাঠিয়েছিলাম মতামতের জন্য। এখন দেখি সেই গল্প নিয়ে সিনেমা হচ্ছে। চরিত্র থেকে শুরু করে ক্লাইম্যাক্স সবই আমার লেখা থেকে নেওয়া।” তিনি আরও জানান, পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে উপেক্ষা করা হয়। এখন আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানেও নোটিশ পাঠিয়েছেন।
অভিযুক্ত পরিচালকের পক্ষের বক্তব্য: অভিযুক্ত পরিচালক মাহফুজুল হক তানভীর, যিনি এর আগেও সরকারি অনুদানে ছবি নির্মাণ করেছেন, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, “আমি এই গল্প বহু বছর আগে থেকেই ভাবছি। ওর (রাফিদের) সঙ্গে হয়তো মিল থাকতে পারে, কিন্তু সেটি অনিচ্ছাকৃত। আমি কোনো কনটেন্ট চুরি করিনি।” তিনি বলেন, সিনেমার প্লট একই রকম হলে সেটি কাকতালীয়ও হতে পারে।
পরিচালক সমিতির অবস্থান: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম কায়সার বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দু’পক্ষকে ডাকা হবে। যদি প্রমাণ হয় যে চিত্রনাট্য ব্যবহার করা হয়েছে অনুমতি ছাড়া, তাহলে সংশ্লিষ্ট পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চিত্রনাট্য রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ফেডারেশনও নতুন একটি কেন্দ্রীয় নথি চালুর কথা ভাবছে বলে জানা গেছে।
চলচ্চিত্রে আইনি সুরক্ষা কতটা কার্যকর?
চলচ্চিত্র গবেষক ড. তানভীর ইসলাম মনে করেন, “বাংলাদেশে চিত্রনাট্য রেজিস্ট্রেশনের কোনো বাধ্যতামূলক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেই। ফলে গল্প চুরি প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।” তিনি বলেন, ভারতে ‘স্ক্রিন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা আমেরিকার ‘রাইটার্স গিল্ড’ যেমনভাবে কাজ করে, বাংলাদেশে তেমন কাঠামো গড়ে না উঠলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
নতুনদের জায়গা তৈরির আগে সুরক্ষা জরুরি: ঢালিউডে নতুন প্রজন্মের নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকারদের জায়গা করে দিতে হলে আগে নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির নিরাপত্তা। নয়তো সম্ভাবনাময় তরুণেরা পিছিয়ে পড়বেন, আর ইন্ডাস্ট্রির গতি থমকে যাবে। চলচ্চিত্র একটি সম্মিলিত শিল্প হলেও, তার ভিত্তি হয় গল্প দিয়ে। সেই গল্প যদি সুরক্ষিত না হয়, তবে শিল্পের স্বাধীনতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।