রিজার্ভ বাড়ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনছে; তবে এলসি খোলার নিম্নগতি ও উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহে অর্থনীতিতে অঘোষিত স্থবিরতার সংকেত
প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৪:০৪
বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলোর একটি ছিল ‘ডলার সংকট’। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এ সংকট আমদানি, বিনিয়োগ, শিল্প উৎপাদন ও বাজারকে অস্থির রেখেছিল। তবে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পণ্য রফতানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। শুধু জুলাই মাসেই রফতানি আয় বেড়েছে রেকর্ড ২৫ শতাংশ। একই সময়ে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। হুন্ডি কমে অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো বাড়ায় রেমিট্যান্সে এ রেকর্ড প্রবাহ দেখা দিয়েছে।
এতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, রিজার্ভও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুলাই মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ৫০ কোটি ২০ লাখ ডলার কিনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে উল্টো বাস্তবতা হলো, এলসি খোলায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত জুনে মাত্র ৪.১৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৫ শতাংশ, শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য ৬ শতাংশ এবং কাঁচামাল প্রায় শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ কমেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি নতুন বিনিয়োগ না বাড়ার অঘোষিত সংকেত। উদ্যোক্তারা সুদহার ও খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনাগ্রহী। এখন আমদানি অর্থায়নের সুদহার দাঁড়িয়েছে ১৪-১৮ শতাংশে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক ঝুঁকিও বিনিয়োগে প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ইউরোপের মন্দা ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা তৈরি পোশাক রফতানির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে এলসি খোলার প্রবণতা এভাবে কমে যাওয়া বিপজ্জনক। ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে না পারলে ডলার প্রবাহ থাকলেও অর্থনীতি চাঙা হবে না।”
সব মিলিয়ে অর্থনীতির চিত্র দ্বিমুখী। ডলারের সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও বিনিয়োগ ও আমদানির গতি না বাড়লে স্থবিরতা কাটবে না। তাই অর্থনীতিবিদদের মতে “সংকট আপাতত কেটেছে, তবে টেকসই সমাধান আসেনি।”
কীওয়ার্ড