 
                            প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:৪৩
গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী (৬০) শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ধর্মীয় বক্তা আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর ফেসবুক লাইভে যোগ দিয়ে মুফতি মুহিব্বুল্লাহ এই স্বীকারোক্তি দেন।
রাত ১২টার দিকে বিক্রমপুরী লাইভে আসেন এবং ফোনে মুহিব্বুল্লাহর মেয়েকে সংযুক্ত করেন। তার মেয়ে জানান, তার বড় ভাই জানিয়েছেন, তাদের বাবা স্বীকার করেছেন যে, ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ তার নিজের পরিকল্পনা।
এরপর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিক্রমপুরী আবার লাইভে এসে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ তাকে জানায়, তিনি চাইলে মসজিদের ভেতরে যেতে পারেন, তবে তার সঙ্গে একজনের বেশি কাউকে নিতে পারবেন না। কিন্তু বিক্রমপুরী সেই প্রস্তাবে রাজি হননি।
ঠিক সে সময় বিক্রমপুরীর ফোনে কল আসে মুফতি মুহিব্বুল্লাহর ছোট ছেলের কাছ থেকে, যিনি নিজেও একজন আলেম। পরে মুহিব্বুল্লাহ নিজেই ফোনে আলাপ করেন এবং বলেন, ‘সব কিছু আমার নিজের করা। আমি পরিকল্পনা করেই পঞ্চগড়ে গিয়েছি, গুম হওয়ার নাটক সাজিয়েছি, ভিডিও ভাইরাল করেছি। তাই এই বিষয়ে আর কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না।’
উল্লেখ্য, মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী সামাজিক মাধ্যমে ‘মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানী’ নামে পরিচিত।
গত ২২ অক্টোবর তিনি দাবি করেছিলেন, টঙ্গীর শিলমুন এলাকার একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে অপহরণ করা হয়। পরে পরদিন পঞ্চগড়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার কথাও নিজেই প্রচার করেন।
তিনি আরও বলেছিলেন, অপহরণের আগে একাধিকবার হুমকির চিঠি পেয়েছিলেন এবং অপহরণের পর শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিলেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সিসিটিভি ফুটেজ যুক্ত করে আলোচিত সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের লেখেন,
‘গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী দাবি করেছিলেন গত ২২ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।
তবে উক্ত এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সকাল ৬টা ৫২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তিনি ঘর থেকে বের হন। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বাঁ হাতে দরজা খুলে বের হন, পেছন ফিরে তাকাননি এবং টিনের দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ৬টা ৫৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে তিনি মসজিদ ছাড়েন এবং প্রায় ৬টা ৫৪ মিনিটে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কে কালীগঞ্জের দিকে রওনা হন। পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, মাথায় কালো রঙের পাগড়ি।
মুহিব্বুল্লাহর বাসার অদূরে শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভারশন সেন্টারের চারটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও এজাহারে উল্লেখিত অপহরণের বর্ণনার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়া চারটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মুহিব্বুল্লাহ পাম্পের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন।
ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স পথরোধ করে তাকে অপহরণের যে দাবিটি করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে এরকম কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। বরং তাকে একাই দ্রুতগতিতে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
সামনের সেতুর উপরে পুলিশের স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় মুহিব্বুল্লাহ একাই হাঁটছেন। অথচ এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ফিলিং স্টেশনের সামনে তাকে অপহরণ করাহয়।
৬টা ৫৪ মিনিটে এলাকা থেকে রওনা হয়ে তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান সকাল ৭টা ১৮মিনিটে।
ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের জানান, ‘তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা আমাদের সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে, আমাদের ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে হুজুরকে অপহরণ করা হয়নি।’
এরইমধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, অভিযোগ করা হয়েছিল, ইমাম মহিব্বুল্লাহ’র অপহরণের পেছনে ইসকন জড়িত। তবে তদন্তে উঠে আসে—তিনি অপহৃত হননি, বরং নিজেই গিয়েছিলেন পঞ্চগড়ে। এ ঘটনায় ইমাম মুহিব্বুল্লাহর বাসের সহযাত্রী এবং সুপারভাইজারও পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে ইমাম মুহিব্বুল্লাহ পুলিশের কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেছেন। তার দেওয়া তথ্যের সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তাকে আদালতে নেওয়া হবে। পরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।