ট্রাভেল বিজনেস পোর্টাল
 
                            প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৪:৪৮:০৬
দেশের ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিতে আবারও বড় ধাক্কা। অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রাভেল বিজনেস পোর্টাল’ গ্রাহকের শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মঞ্জুরুল আলম ও জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইমন আলম এরইমধ্যে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
এর আগে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ ও ‘ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল’-এর কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন এই ঘটনা পুরো খাতজুড়ে আস্থার সংকট তৈরি করেছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও সাব-এজেন্টদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক মাস ধরে ‘অবিশ্বাস্য ছাড়ে টিকেট ও ট্যুর প্যাকেজ’ বিক্রির অফার দিয়ে বাজার থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে।
কিন্তু হঠাৎ করেই গত রোববার রাতে তাদের ওয়েবসাইট (travelbusinessportal.com) বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন রাজধানীর প্রগতি সরণির অফিসে গিয়ে দেখা যায়—দরজায় তালা ঝুলছে, কর্মকর্তাদের খোঁজ নেই।
‘ট্রাভেল বিজনেস পোর্টাল’ মূলত বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) ও বিজনেস-টু-কাস্টমার (বিটুসি) দুই মডেলেই কাজ করত। শতাধিক ছোট এজেন্সি তাদের সিস্টেম ব্যবহার করে টিকেট ইস্যু করত।
এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ‘ট্রাভেল বিজনেস পোর্টালের স্বত্বাধিকারী মো. মঞ্জুরুল আলম তাদের সঙ্গে এয়ার টিকেট বিক্রয় সংক্রান্ত একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী মঞ্জুরুল আলম গত ২০ আগষ্ট থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত স্বপ্ন ট্যুর’র ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) থেকে এয়ার টিকেট ইস্যু করেন যার বিপরীতে সর্বমোট ২১ কোটি ৭০ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩৩ টাকা আমরা পাই। এই টাকার মধ্যে পরিশোধকৃত টাকা বাদ দিয়ে আমরা বর্তমানে তার কাছে ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছি। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর সকালে মঞ্জুরুল আলমের অফিসে যোগাযোগ করি। সেখানে গিয়ে দেখি, তার অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ এবং অফিস তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। তিনি এবং তার সহকমীর্দের সঙ্গে সম্ভাব্য সবভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।’
এক সাব-এজেন্ট বলছেন, ‘আমাদের প্রায় ৩০ লাখ টাকা তাদের পোর্টালে জমা ছিল। সামনে গ্রাহকদের টিকেট ইস্যুর জন্যই এই টাকা রাখা হয়েছিল। এখন সব শেষ। গ্রাহকদের কী বলব জানি না।’
এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান নাগরিক প্রতিদিনকে বলেন, ‘ট্রাভেল এজেন্সির নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। তবে এর মালিকেরা বিদেশে পালিয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রতারণার ধরন নতুন নয়। প্রতিবারই একই কৌশল—অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে টিকেট বিক্রির ঘোষণা, গ্রাহক আকৃষ্ট করে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম সংগ্রহ, তারপর উধাও হয়ে যাওয়া।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বহুবার সতর্ক করেছি, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিছু অসাধু চক্রের কারণে পুরো ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রির ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’
ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতারণার জন্য দায়ী অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) প্ল্যাটফর্মগুলোর দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও অনৈতিক ব্যবসায়িক মডেল।
তাদের আশঙ্কা, এই চক্রটি দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে এবং গ্রাহকের শতকোটি টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই আর নেই।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তিনটি বড় অনলাইন ট্রাভেল কোম্পানি হঠাৎ ধসে পড়েছে, যা বাংলাদেশের ট্রাভেল খাতের জন্য এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক নজরদারি ছাড়া এভাবে ডিজিটাল প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব নয়।