 
                            প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪২:৫৯
জামালপুর সদর উপজেলায় একটি জমিতে বিষাক্ত ঘাস ও পানি খেয়ে ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয়েছে ৬টি গরুর। এছাড়া চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আরও ছয়টি গরুকে। একমাত্র উপার্জনের আশ্রয় এই গরুগুলোকে হারিয়ে কান্না থামছে না কৃষক হেকমত আলীর। নিঃস্ব হওয়ার আশঙ্কায় বিলাপ করছেন, ‘হে আল্লাহ, এখন আমি কী করব! গরুগুলোই ছিল আমার একমাত্র ভরসা।’ তার দাবি, ‘গরুগুলোর মৃত্যুতে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ডিগ্রীরচর কারখানার পুরোনো ব্যাটারির সিসা ও অ্যাসিডসহ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশে গিয়েছিল আশপাশের জমিতে। আর সেসব জমির ঘাস খেয়ে প্রাণ গেছে গরুগুলোর।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে পুরোনো ব্যাটারি পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের এই কারখানাটি পরিচালনা করছিলেন শেরপুর জেলার বালুখোড়া এলাকার মো. আপেল ও লিখন। তারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা ও অ্যাসিডসহ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ফেলে আসছিলেন। এতে দূষিত হয়ে পড়ে আশপাশের কৃষিজমি ও পানি।
কৃষক হেকমত আলীর দুই মেয়ে ভাবনা ও লিমা বলেন, ‘আমাদের কোনো জমিজমা নেই। বাবার গরুর দুধ বিক্রি করেই সংসার চলত, পড়াশোনার খরচ উঠত। এখন সব শেষ, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যাটারি কারখানায় বর্জ্য পোড়ানোর সময় ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া ও তরল পদার্থের কারণে শুধু গবাদি পশুই নয়, আশপাশের হাঁস-মুরগি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে ব্যাটারি কারখানার ১৮ জন শ্রমিককে নিরাপত্তার কারণে পুলিশের হেফাজতে পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরুন্দি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সজিব।
এ ঘটনায় জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, ‘ব্যাটারি কারখানার সব তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। ভুক্তভোগী পরিবার থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জামালপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের চার সদস্যের একটি টিম পাঠানো হয়। মৃত গরুগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে। নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া অসুস্থ গরুগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’