অফিস নয় চার দেওয়ালের মাঝে কর্মক্ষেত্রে বদলের হাওয়া-
প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০২৫, ৩:৫৭:০৯
কাজের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা এ নিয়মে বন্দি ছিল অফিস সংস্কৃতি। কিন্তু কোভিড-১৯ পরবর্তী বাস্তবতা পাল্টে দিয়েছে সেই দৃশ্যপট। এখন বৈশ্বিক চাকরির বাজারে একটা বিষয় স্পষ্ট নমনীয়তা হচ্ছে ভবিষ্যতের কর্মদক্ষতার চাবিকাঠি। আর তাই চাকরির বিজ্ঞপ্তিতেই লেখা থাকছে, “Looking for adaptable team players”। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান ও সিঙ্গাপুরে সাম্প্রতিক হিউম্যান রিসোর্স গবেষণাগুলো দেখাচ্ছে, কেবল ‘টেকনিক্যাল স্কিল’ নয়, 'সফট স্কিল' এখন সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সফট স্কিলের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নমনীয়তা (Flexibility)। “আমরা এমন কর্মী খুঁজি, যিনি পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং নতুন পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন” বললেন গুগলের মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ লরা হেস্টিংস। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ঢাকার একটি বড় আইটি কোম্পানির সিইও জানালেন, “আগে আমরা ঠিক করতাম কর্মীদের অফিস টাইম। এখন কর্মীরা নিজেরা জানান কখন তারা প্রোডাক্টিভ। আমরাও নমনীয়তা শেখার চেষ্টা করছি।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে হাইব্রিড কাজের ধরন, গিগ ইকোনমির উত্থান, এবং তরুণ প্রজন্মের জীবনধারার চাহিদা এ পরিবর্তনের মূল কারণ। এখন কর্মীরা কেবল বেতন নয়, চায় মানসিক প্রশান্তি, কাজের স্বাধীনতা ও কাজ-জীবনের ভারসাম্য। একসময় যেখানে ‘নমনীয় কর্মী’ মানে ছিল ‘সব মেনে চলা’, এখন তার মানেই দাঁড়িয়েছে পরিবর্তনে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, সংকটে শান্ত থাকা এবং নতুন পরিবেশে নেতৃত্ব দেওয়া। বিশ্বের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান যেমন মাইক্রোসফট, ডেল, অ্যামাজন এমনকি টাটা কনসালটেন্সির মতো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানও তাদের হায়ারিং পলিসিতে ‘অ্যাডাপ্টেবিলিটি’কে প্রধানযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করছে।এই পরিবর্তন সমাজের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। বিশেষ করে নারী কর্মীদের জন্য নমনীয় সময় ও কাজের ধরন হয়ে উঠেছে কাজের নিরাপত্তার বড় হাতিয়ার। “নতুন প্রজন্ম কাজ খোঁজে, কিন্তু সেটা যেন জীবনকে বিপর্যস্ত না করে” বললেন মনোবিজ্ঞানী রাশেদা আক্তার। কর্মদক্ষতা আর নমনীয়তার এই যুগে প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন নিজেকে বদলানো। না হলে পেছনে পড়ে থাকবে তারা। কেননা আগামীর কর্মী চাইবে শুধু কাজ নয় চাইবে উপলব্ধি, স্বাধীনতা আর সহানুভূতি।
“নমনীয়তা এখন শুধু চাওয়া নয়, এটি ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের নতুন মানদণ্ড।”