 
                            প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১:১১:২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও বাজেট সংকট। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে বসানো হচ্ছে ৯টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি), যার ব্যয় ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ছাড়া কোথাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) বসানোর নিয়ম নেই। তা উপেক্ষা করেই ডাকসু নেতাদের চাপে উপাচার্য (ভিসি) এসিগুলো বসানোর অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে রাজস্ব বাজেট থেকে এসি বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তখন বিদেশে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তার পরিবর্তে রুটিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ। পরে গত ১ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন অধ্যাপক জাহাঙ্গীর।
প্রশাসন সূত্র বলছে, শুরুতে এসি বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বারবার ফোন করে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। সে কারণে অনুমোদন দেন ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ।
কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, তিনি ছুটিতে থাকা অবস্থায় এসবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোন নিয়মের ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি থাকলে অবশ্যই প্রশ্ন তুলতাম, এটা হওয়ার কথা না। কেন দেওয়া হচ্ছে সেটার ব্যাখ্যা চাইতাম। সব কিছু একটি জবাবদিহির মধ্যে থাকা উচিত।’
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলছেন, রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবে উপাচার্যের কাছে ফাইলটি পাঠিয়েছিলেন। তবে তিনি অনুমোদন করেননি, উপাচার্য অনুমোদন করেছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি এটা আমার রুটিন দায়িত্ব না হতো, আমি অবশ্যই বিষয়টি কুয়েরি দিতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আমি উদার হতে রাজি আছি। কিন্তু কোনো ফ্যান্সি কিছু দিতে হয়, এসি দিলে সে সুন্দর করে ঘুমাতে পারবে, এখানে আমি উদার হতে পারব না। কারণ আমি শিক্ষার্থীর মৌলিক চাহিদা ঠিকঠাক পূরণ করতে পারছি না। তোমাকে কীভাবে দেব? বিষয়টি আরও ক্লোজলি দেখা দরকার ছিল।’
সরকারি ক্রয় বিধিমালার (পিপিআর) ৯৭ ধারা অনুযায়ী, দুর্লভ পণ্য, জরুরি পণ্যের ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করার কথা। যদি জরুরি না হয়, তাহলে সাধারণত উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেনার নিয়ম। এ ক্ষেত্রে সেটিও লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এদিকে, ডাকসু থেকে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা (বিদ্যুৎ) আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, “প্রশাসন অনুমোদন দেওয়ায় তারা এসি বসানোর কাজ করছেন। ‘গ্রি’ কোম্পানির মোট ৯টি এসি বসানো হচ্ছে। সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় দ্রুতই এসিগুলো বসানো হবে।”
হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বাজেটে ডাকসুর জন্য মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা গেছে, এর মধ্যে ডাকসু ভবনের সংস্কার এবং সৌন্দর্য বর্ধনে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আরও বেশ কিছু সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি এসি বাবদ ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা, সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ৭১ হাজার টাকা, পানির ফিল্টারে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ভিত্তিতে ডাকসু ভবনে আসবাবপত্র ও পর্দায় চার লাখ টাকা, নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা শৌচাগার নির্মাণে সাড়ে তিন লাখ টাকা, নতুন ওয়ার্ক স্টেশনের জন্য দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা, কক্ষ সংস্কার এবং রঙের কাজে দুই লাখ ৫২ হাজার টাকা, সাইনবোর্ড রং করা, ক্রোকারিজ, আসবাবে ৮৩ হাজার টাকার কাজ হচ্ছে। সবগুলো কাজ করা হচ্ছে ডিপিএম পদ্ধতিতে। এ ছাড়া ডাকসুতে নামাজঘর নির্মাণের একটি প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন।
ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সরাসরি ডাকসু নেতারা প্রশাসনের কাছে এসি চেয়েছেন, প্রশাসন বরাদ্দ দিয়েছে। সরাসরি হয়েছে, আমার মাধ্যমে এটি হয়নি।’
এ বিষয়ে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘আমি এটা খোঁজ নেব, এটা কীভাবে হয়েছে। খবর নিয়ে দেখব যে, এসি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধিকারের কোনো ব্যাপার যদি থাকে, আমাকে দেখতে হবে।’
এরই মধ্যে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘ডাকসুতে বসার অবস্থা না থাকায় আমরা শুধু দ্রুত একটা ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্ট তৈরির ব্যাপারে বলেছিলাম। এসির বিষয়ে আলাদাভাবে কিছু বলা হয়নি।’
এ বিষয়ে ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমরা পুরো কাজের জন্য প্রেশার (চাপ) দিয়েছি। এসি বিলাসবহুল হয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় না দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতি থাকায় আমরা নিজস্ব উদ্যোগে সিসিটিভির ব্যবস্থা করেছি। প্রকৌশলীরা নতুন অনেক কিছু কিনতে চাইলেও আমরা সতর্ক থেকেছি। পুরোনো অনেক জিনিস সংস্কার করে ব্যবহার করছি।’