বিতর্কিত চরিত্র, জটিল ভাবানুবাদ, আর ভাষার রাজনীতি ইংরেজি সাহিত্যে
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৩:০৯:৩৬
বিতর্কিত চরিত্র, জটিল ভাবানুবাদ, আর ভাষার রাজনীতি ইংরেজি সাহিত্যের অনুবাদে বাংলা পাঠকের চোখেমুখে নতুন কৌতূহল, প্রকাশকদের মুখে নতুন হিসাব। “ভাষা শুধু অনুবাদ হয় না, তার সঙ্গে আসে সংস্কৃতি, বোধ, এবং সময়ের গন্ধও।” রেজওয়ান আদনান, অনুবাদক ও সাহিত্য সম্পাদক
পাঠকের হাতে যখন 'টোনি মরিসন'-এর 'Beloved' বা 'মার্গারেট অ্যাটউড'-এর 'The Handmaid's Tale'-এর বাংলা অনুবাদ আসে, তখন প্রশ্ন ওঠে এই অনুবাদ কি পাঠককে মূল লেখকের মতোই নাড়া দিতে পারে? এখন বাংলা বইয়ের বাজারে ইংরেজি ক্লাসিক কিংবা সমকালীন সাহিত্যের অনুবাদ যেন নতুন এক ‘কূটনৈতিক চুক্তি’ একদিকে পাঠকের আগ্রহ, অন্যদিকে প্রকাশকের হিসাবি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন শুধু সাহিত্যের নয়, অনুবাদেরও যুগ চলছে। সাম্প্রতিক বইমেলায় দেখা গেছে আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী অনেক ইংরেজি বইয়ের অনুবাদ বিক্রি হচ্ছে হাতেগোনা লেখকদের মৌলিক বইয়ের চেয়ে বেশি। অনেকে বলছেন, বাংলা পাঠকের সাহিত্যের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে এতে। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন এই অনুবাদ কি শুধুই ভাষান্তর, না কি এটি হয়ে উঠছে একপ্রকার সাংস্কৃতিক রূপান্তর?
বিশেষজ্ঞের চোখে অনুবাদ সাহিত্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুবাদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আরিবা জামান বলেন, "অনুবাদ মানে শুধু ভাষা বদল নয়। পাঠকের ভাবনার মানচিত্রেও বদল আসে। সুতরাং অনুবাদ যতটা সাহিত্যিক কাজ, ততটাই কৌশলগত।" তবে বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে একটি বড় সংকট হলো মূল টেক্সটের নুয়ান্স অনেকসময় হারিয়ে যায়। বিশেষ করে উপমা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং ভাষার গতি অনেক সময় সহজভাবে ধরতে পারেন না অনুবাদক।
বিশ্বপ্রসঙ্গ
ভারতের অনুবাদ প্রকাশনায় 'জুবান', 'অ্যাটিকাস', এমনকি 'পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া' এক বিশাল বাজার তৈরি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কিম জি ইয়ং-এর অনুবাদ বা আফ্রিকার চিনুয়া আচেবের ‘Things Fall Apart’ এসব অনুবাদ বই আন্তর্জাতিকভাবে দারুণ প্রশংসিত। বাংলাদেশেও কি তেমন কিছু হচ্ছে? “একটা অনুবাদ যদি পাঠককে জাগিয়ে না তোলে, তাহলে সেটা কেবল কাঠামোই বদলায়, সাহিত্যের আত্মা নয়।” নুসরাত সায়িদা, প্রকাশক ও সাহিত্য গবেষক
শেষ কথা:
ইংরেজি সাহিত্য এখন আর শুধু বিদেশি বিষয় নয়, সেটি বাংলা পাঠকের ঘরেও ঘোরে। কিন্তু এই যাত্রা কতটা নিখুঁত? অনুবাদক-প্রকাশক-পাঠকের এই ত্রিমুখী কূটনীতি হয়তোই নির্ধারণ করবে বাংলা ভাষায় বিশ্বসাহিত্য কতটা প্রাণ পায়।
পাঠকের অনুভূতির ভাষা কি অনুবাদের আয়নায় পুরোটা ধরা পড়ে? নাকি থেকে যায় কিছুটা ঝাপসা? এ প্রশ্ন থেকেই শুরু হতে পারে অনুবাদের ভবিষ্যতের গল্প।