অস্ট্রেলিয়ার সাহিত্য যেন এক শ্বাসরুদ্ধ করা আয়না যেখানে ধরা পড়ে সমাজের নির্মম বাস্তবতা, বিশেষ করে বর্ণবাদের দীর্ঘস্থায়ী ছায়া। প্রথম পর্বে উঠে এসেছে এই বৈষম্যের ঐতিহাসিক শেকড় ও মানবিক প্রতিবাদের গল্প।
প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২৫, ১১:১৪:২৫
কলমের ধার, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ
উনিশ শতকের শেষভাগ থেকেই অস্ট্রেলিয়ান সাহিত্যে আদিবাসী ও বর্ণবাদবিরোধী সাহিত্যিক কণ্ঠ উঠে আসতে শুরু করে। হেনরি লসন, ক্যাথারিন সাসম্যান থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক লেখক লুইস নউনু সবার লেখায় বারবার উঠে এসেছে একটি শব্দ: ‘বঞ্চনা’। “অস্ট্রেলিয়ান সাহিত্যে বর্ণবাদ একটি অবিচ্ছেদ্য থিম। এটি শুধু একধরনের প্রতিবাদ নয়, বরং আত্মপরিচয় রক্ষার এক অস্ত্র,” বললেন সিডনিভিত্তিক সাহিত্য গবেষক ড. এলিজা গ্রেগরি। বিশ্বসাহিত্যের বিশ্লেষণেও দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার সাহিত্যিক আন্দোলন অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের "হারলেম রেনেসাঁ" বা দক্ষিণ আফ্রিকার "ব্ল্যাক কনশাসনেস" আন্দোলনের ছায়া অনুসরণ করেছে। তবে তফাৎটা হলো এখানে লেখকরা নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্যই কলম ধরেছেন।
গল্পের ছায়ায় জেগে ওঠে জাতিগত ক্ষত
আধুনিক সাহিত্যেও এই বৈষম্য ছায়া ফেলে চলেছে। আদিবাসী লেখক টারা জুন উইঞ্চের "The Yield" উপন্যাসটি যেমন বর্ণবাদ ও সাংস্কৃতিক নির্মূলকে তুলে ধরেছে, তেমনি অনুপ্রবেশকারী বাঙালি, লেবানিজ কিংবা আফ্রিকান প্রবাসীদের কণ্ঠেও উঠে আসে এক অজানা কষ্ট। সিডনির লেখক আফরিন চৌধুরী তাঁর উপন্যাস "প্রান্তিক পৃষ্ঠা"-তে লিখেছেন: “বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ইংরেজি বলি, চাকরি করি। কিন্তু আমার গায়ের রঙটাই যেন অস্ট্রেলিয়ার চোখে এক বিভ্রান্তি।”
সংস্কৃতি বনাম শেকড়
এই সাহিত্যিক লড়াই শুধু বর্ণবাদ বিরোধিতার নয়, বরং এটি একটি প্রশ্ন: কীভাবে একজন মানুষ নতুন সমাজে নিজের শেকড় খুঁজে নেয়? তরুণ লেখকরা এখন আরও বেশি করে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেনউদ্দেশ্য একটাই: ইতিহাস যেন ভুলে না যায়, আর শিল্প যেন কেবল শিল্প না থাকেথাকে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে।
“লেখা মানে শুধু গল্প বলা নয়, এটা নিজের অস্তিত্ব চিৎকার করে জানান দেওয়া।” টারা জুন উইঞ্চ
এই প্রতিবেদন সিরিজে আমরা তুলে ধরবো
শেষ কথা:
সাহিত্য কখনো নীরব থাকে না। একেকটি পৃষ্ঠায় যেন প্রতিধ্বনিত হয় একেকটি কান্না, প্রতিরোধ আর আত্মমর্যাদার দাবি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সাহিত্যিক সংগ্রাম সেই আত্মার ভাষা, যেটা বইয়ের পৃষ্ঠায় নয় জাগে পাঠকের হৃদয়ে।
এটাই সাহিত্য, এটাই প্রতিরোধ।