দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী বাঙালিরা গড়ছেন নিজেদের মতো করে এক নতুন বাংলাদেশ। সংগ্রাম, সাফল্য আর সংস্কৃতির টানাপোড়েন নিয়ে শুরু হচ্ছে এক অনন্য ধারাবাহিকতা।
প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২৫, ১১:০৮:৩৪
ভাষার টানাপোড়েন, সংস্কৃতির লড়াই
প্রথম প্রজন্ম যেখানে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের লড়াই আত্মপরিচয়ের। মেলবোর্নের ৩২ বছর বয়সী টেলি-জার্নালিস্ট সাবরিন আহমেদ বলেন, “বাড়িতে আমি বাংলা বলি, কিন্তু অফিসে বা বন্ধুদের সঙ্গে ইংরেজি। মাঝেমাঝে মনে হয় আমি কোথাও পুরোপুরি নিজেকে খুঁজে পাই না।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দ্বৈত পরিচয় কখনো ভারসাম্য, আবার কখনো বিভ্রান্তি। সিডনিভিত্তিক সমাজবিজ্ঞানী ড. নিকোলাস গ্রেভসের মতে, “বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণরা এখন অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল সমাজে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকার। এটা একধরনের 'ডায়াস্পোরিক ভার্সন অফ সেলফ'।”
সফলতার পেছনে অব্যক্ত গল্প
প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, মিডিয়া বা একাডেমিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ানরা এখন অনেক উচ্চতায়। কিন্তু এই উচ্চতার পেছনে রয়েছে আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন, বিদেশি সমাজে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের কঠিন পথচলা। ৩৫ বছর বয়সী স্নিগ্ধ রফিক, যিনি বর্তমানে গুগল অস্ট্রেলিয়ার প্রোডাক্ট ম্যানেজার, জানালেন “স্কুলে আমার নামটা উচ্চারণ করেই শিক্ষকরা হিমশিম খেতেন। বন্ধুরা বলত 'স্নিগ-দা কী?' তখন ভেতরে ভেতরে লজ্জা পেতাম। আজ স্নিগ্ধ নামেই আমি গর্ব করি।”
উৎসবেও বাংলা, কষ্টেও বাংলা
সিডনির বাংলা স্কুলগুলো, ঈদ-উৎসব, বইমেলা সব মিলিয়ে আজ বাঙালি সমাজ সেখানে এক চলমান প্রাণ। তবুও সংস্কৃতির সঙ্গে টানাপোড়েন আছে। অনেকে বলছেন, প্রজন্মের ব্যবধানে বাংলার আবেগও কিছুটা বদলে যাচ্ছে। তবে নতুন প্রজন্মের চোখে 'বাংলাদেশ' এখন আর শুধু এক ভূখণ্ড নয়, বরং এক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠছে।
“আমি কখনো বাংলাদেশে যাইনি, কিন্তু যখন রবীন্দ্রসংগীত শুনি, মনে হয় আমি আমার শিকড়ে ফিরছি।” জারিন ফারাহ, তৃতীয় প্রজন্মের প্রবাসী
এই ধারাবাহিক সংবাদ সিরিজে তুলে ধরা হবে
শেষ কথা:
এই প্রজন্মের বাঙালিরা শুধু প্রবাসী নয়, তারা হয়ে উঠছে বিশ্বমানব যাদের হৃদয়ের এক অংশ সিডনিতে, আরেক অংশ ঢাকায়। সাফল্যের এই গল্প শুধু জয় নয়, এ এক নীরব বিপ্লবও বটে।