কঠোর পরিশ্রম আর তরুণদের লড়াইয়ে বদলে যাচ্ছে দেশের ফুটবলচিত্র।
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ৩:২০:০৮
পরিসংখ্যান বলছে উন্নতির কথা: বিশেষ করে গত ছয় মাসে বাংলাদেশের জাতীয় দল যেভাবে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইপর্বে খেলেছে, তা নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদেরও।
শেষ ৬ ম্যাচ: জয় – ৩, ড্র – ২, হার – ১
গোল পার্থক্য: ৯ গোল দিয়েছে, খেয়েছে ৫
নতুন খেলোয়াড় যুক্ত হয়েছে: ৭ জন
বাংলাদেশ দলের ‘নিউ ব্রিড’ এর হাত ধরেই এগিয়ে চলা
জাতীয় দলে এখন যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা মূলত তরুণ ও একঝাঁক নতুন মুখের দাপটে। সোহেল রানার নেতৃত্বে গত ম্যাচগুলোতে যে গতিশীলতা ও একাগ্রতা দেখা গেছে, তা ছিল নজিরবিহীন। সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন “যে দলকে ৩ বছর আগে আন্তর্জাতিক মানে চিনতেই পারত না কেউ, আজ তারা খেলছে আত্মবিশ্বাস নিয়ে। এটি একটি মাইন্ডসেট শিফট।”
টেকনিক্যাল স্টাফ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের ফল
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নতুন পরিকল্পনার অধীনে প্রশিক্ষণ কাঠামোয় এসেছে বড় পরিবর্তন। ইউরোপ ফেরত কোচ, ফিটনেস ট্রেনার এবং অ্যানালিটিক্স টিম যুক্ত হওয়ায় খেলোয়াড়দের স্কিল, স্ট্যামিনা ও স্ট্র্যাটেজিতে এসেছে দৃশ্যমান উন্নয়ন। বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মিথ বলেন “আমরা প্লেয়ারদের শুধু বল নিয়ে খেলতে শেখাই না, শেখাই কিভাবে ‘ম্যাচ রিডিং’ ও ‘ডিসিশন মেকিং’-এ উন্নতি করতে হয়।”এই ‘ব্রেইন কোচিং’ তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি করছে আত্মবিশ্বাস, যা তাদের পারফরম্যান্সে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
জনগণের মাঝে ফিরছে আগ্রহ, মাঠে বাড়ছে দর্শক
খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দেশের ফুটবলভক্তরাও এখন জাতীয় দলের ম্যাচে মাঠ ভরাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, সিলেট, চট্টগ্রাম সবখানেই দর্শকদের উচ্ছ্বাস নতুন করে প্রাণ ফিরিয়েছে দেশের ফুটবল সংস্কৃতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহমিদ ইসলাম বলেন “আমরা অনেকদিন পর এমন দল দেখছি, যারা লড়াই করে। জয় না পেলেও খেলায় আশা দেয়। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।”এটি একটি ‘পারসেপশন শিফট’, যা শুধু খেলায় নয়, একটি প্রজন্মের আত্মপরিচয়ের জায়গায় প্রভাব ফেলছে।
সামনে কী সুযোগ অপেক্ষা করছে?
বাংলাদেশ এখন ২০২৫ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে রয়েছে বিশ্বকাপ ২০২৬-এর বাছাইপর্বের পরবর্তী ধাপ। এই উন্নত র্যাংকিং বাংলাদেশকে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। সাবেক অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন “আমাদের লক্ষ্য হতে হবে র্যাংকিংয়ে ১৫০-এর মধ্যে আসা। সেটা সম্ভব নিয়মিত ম্যাচ, ভালো প্রস্তুতি এবং মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে।”এমন লক্ষ্য শুধু কাগজে নয়, মাঠের খেলাতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
উন্নতির শুরু মানেই নতুন যাত্রা
ফিফা র্যাংকিংয়ের উন্নতি হলো বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন যাত্রার শুরু। অনেকেই এখনো সন্দিহান, তবে উন্নতির পথ কখনো সোজা হয় না।মাঠে ঘাম, টেকনোলোজির ব্যবহার, এবং মানসিক দৃঢ়তায় যদি এই পথচলা চলতে থাকে, তাহলে হয়তো আগামী দশকে আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দল হিসেবেই দেখতে পাব।
ছোট অগ্রগতি, বড় স্বপ্নের সূচনা
ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি জাতির আশা, আত্মপরিচয় এবং ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ যেভাবে ফিফা র্যাংকিংয়ে এগোচ্ছে, তা আমাদের বলে দেয় আমরা পারি।এখন প্রয়োজন ধৈর্য, ধারাবাহিকতা আর তরুণদের ওপর বিশ্বাস রাখা। তখনই হয়তো আমরা একদিন গর্ব করে বলতে পারবো “আমাদের ফুটবল দলও বিশ্বমঞ্চে লড়তে পারে।”