হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা ছিল ব্যবসার ভিত্তি। ১৪শ বছর আগের সেই ব্যবসায়িক কৌশল আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে নৈতিকতার সংকটে থাকা এই বিশ্ববাণিজ্যে।
প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২৫, ১:৩৮:৫৯
আজকের দুনিয়ায় ব্যবসা যেন শুধু লাভ আর প্রতিযোগিতার খেলা। কিন্তু এই চর্চার বাইরে এক সময়ের মরু শহর মক্কায় জন্ম নিয়েছিল এক নতুন ব্যবসায়িক দর্শন, যেখানে মুনাফার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘বিশ্বাস’। আর এই দর্শনের মুখ্য বাহক ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যবসা শুরু করেছিলেন খুব অল্প বয়সে। খদ্দেররা জানতেন, "আল-আমিন" নামের এই তরুণ কখনো প্রতারণা করবেন না। ব্যবসায়িক লেনদেনে তার শুদ্ধতা এতটাই ছিল যে, ধনকুবেরা তাঁকে নিজ দায়িত্বে বাণিজ্যের জন্য নিয়োগ দিতেন। সেই সময়কার বিখ্যাত ধনী নারী খাদিজা (রা.)-ও ঠিক এমন সততার সাক্ষী হয়ে তাঁকে নিজের ব্যবসার অংশীদার করেছিলেন। বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও ইসলামিক ফিন্যান্স গবেষক ড. উমার চ্যাপরা বলেন "নবিজি (সা.)-র ব্যবসায়িক কৌশলের মূল ছিল ট্রাস্ট ইকোনমি-যেখানে রিলেশনস ও নৈতিকতা আগে, টাকা পরে।" তিনি দেখিয়েছেন, ব্যবসা মানে শুধু কারবার নয়, এটি একটি ইবাদতের অংশ যদি সেখানে থাকে সত্যতা, পরিমিত লাভ, পরিশ্রম ও দয়া। নবিজির কাছে প্রতারণা ছিল সর্বোচ্চ অগ্রহণযোগ্য। তার জীবনে ব্যবসায়িক ‘সফলতা’ এসেছে শুধু পণ্য বিক্রিতে নয়, বিশ্বাস বিক্রির মাধ্যমে। বিশ্বে যেসব সফল উদ্যোক্তা আছেন টমাস ওয়াটসন, ওয়ারেন বাফেট বা ইলন মাস্ক তাঁরা সবাই নৈতিকতার উপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (সা.) তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক অন্যরকম প্রেক্ষাপটে, যেখানে সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতাই ছিল মূল পুঁজি।
বর্তমান বাংলাদেশের ব্যবসা খাতেও যদি এই নববি নীতি কার্যকর হয়, তবে শুধু ব্যক্তি নয় সমাজ ও রাষ্ট্রও উপকৃত হবে। বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এই কৌশল হতে পারে এক অব্যর্থ দিকনির্দেশনা।
"যদি মুনাফার পেছনে না ছুটে সত্যের পেছনে ছুটো, মুনাফা নিজেই আসবে এই ছিল নবিজির (সা.) ব্যবসার দর্শন।"
আজকের করপোরেট চর্চা যখন দুর্নীতির দায়ে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ, তখন নবিজির মতো একজন ব্যবসায়ীর জীবন ও নীতি নতুন করে ভাবায়। তাঁর নীতি শুধু ধর্মীয় নয়, একটি সুশৃঙ্খল ও মানবিক ব্যবসার রোডম্যাপ যা অনুসরণ করলেই বদলে যেতে পারে পুরো বাজার ব্যবস্থাই।