দেশজুড়ে ১৩৪টি স্কুলে কেউই পাস করেনি এবারের পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার মান ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার ঝড়।
প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২৫, ৪:০৫:৪১
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের ১৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষার্থী পাস করেনি। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০২৪ সালে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি। ফলে এক বছরে বেড়েছে আরও ৮৩টি। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন।
চলতি বছর দেশের ১১টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। সারাদেশে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী।
মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৮৮টি। এর মধ্যে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে না পারায় বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এটি শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এবং তদারকির ঘাটতির প্রতিফলন।
গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কিছুটা বেড়েছে। ২০২৪ সালে মোট ২৯ হাজার ৮৬১টি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং ৩ হাজার ৭৯৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর এবার পরীক্ষা হয়েছে ৩ হাজার ৭১৪টি কেন্দ্রে।
শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকার। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস কার্যক্রম কতটা নিয়মিত ছিল, শিক্ষকসংখ্যা পর্যাপ্ত ছিল কিনা এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করা হয়েছিল কিনা।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত পর্যবেক্ষণ টিম পাঠানো এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা। শুধু প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত না করলে আগামী দিনগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
এ বিষয়ে এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শুধু নামমাত্র স্কুল চালিয়ে কী হবে? সরকার কি খোঁজ নেয়, এইসব জায়গায় শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন কি না?”
প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা যাচাই করে প্রয়োজনে সেগুলোকে অধিগ্রহণ, একীভূতকরণ অথবা বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কেউ কেউ। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, এই ধাক্কা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সুযোগ হিসেবে নিতে হবে।
এখন দেখার বিষয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সংকেত কতটা গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।