মাঠে ছিল আত্মপ্রত্যয়ের আগুন, আর গ্যালারিতে গর্জন
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ১১:৫১:৩৪
ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয় বাংলাদেশে এটি একটি আবেগ, একটি জাতীয় পরিচয়। এই আবেগ আরও গভীর হলো ২০২৫ সালের নারী বিশ্বকাপের এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে। ভারতের শক্তিশালী নারী দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী দল শুধু একটি জয়ই অর্জন করেনি, বরং ভেঙে দিয়েছে ক্রীড়াবিশ্বে এক দীর্ঘদিনের ‘অসমতার দেয়াল’। টসে জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। মাঠে নামে একঝাঁক তরুণী, চোখে আগুন, মনে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন। শুরুতে চাপ থাকলেও দলটি ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। এক সময় ভারতের সুপ্রসিদ্ধ বোলিং আক্রমণ যেন নতজানু হয়ে পড়ে লাল-সবুজের ছন্দময় ব্যাটিংয়ের কাছে।
ব্যাট-বলের লড়াইয়ে সাহসী মেয়েরা
বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা বলেন, "আমরা কেবল ভারতকে হারাইনি, আমরা নিজেদের হার না মানা মানসিকতাকে জিতিয়েছি।" স্মৃতি মন্ধানা, হারমানপ্রীত কৌরের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে যখন ৭ উইকেটে জয় আসে, তখন সেটি কেবল একটি ম্যাচ জেতা নয় সেটি একটি ‘চেতনার বিপ্লব’। বাংলাদেশের রান সংগ্রহ ছিল ২৪৭/৭ এবং ভারত দল গুটিয়ে যায় ২১৮ রানে।ম্যাচ সেরা অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের ৪ উইকেট ও ৩৫ রানের ইনিংস পুরো ম্যাচে ছড়িয়ে দেয় বিজয়ের সুর।
এই জয় শুধু মাঠের নয়, মানসিকতারও
এই ম্যাচ যেন একটি ভাষাহীন বার্তা “নারীরা পারে”। সেই বার্তা প্রতিটি তরুণী মনকে বলে, তুমিও পারো, যদি আত্মবিশ্বাস থাকে। এখানেই যুক্ত হয় নিউরোলিংগুইস্টিক প্রভাব। ক্রীড়ামোদীরা যখন এই জয় দেখে, তাদের মস্তিষ্কে সক্রিয় হয় ডোপামিন, আত্মবিশ্বাস ও শক্তি বাড়ায় অক্সিটোসিন। নারীদের জয় দেখতে দেখতে এক প্রজন্ম বেড়ে উঠছে নতুন বিশ্বাস নিয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েরাও পুরুষদের সমান, এমনকি অনেকক্ষেত্রে এগিয়ে।
ইতিহাসের পাতায় স্থান পেল এই ম্যাচ
এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতকে নারী বিভাগে হারাল। শুধু তাই নয়, পয়েন্ট টেবিলেও এই জয় বাংলাদেশকে তুলে দেয় শীর্ষ তিনে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এই জয়ের প্রশংসা হয়েছে বিস্তর। ক্রিকইনফো শিরোনাম করে, “Bangladesh stun India in a historic women's cricket thriller.” BBC Sport লিখেছে, “Bangladesh women rising strong in South Asian cricket dynamics.”
নারী ক্রিকেটের অদম্য উত্থান
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। পেশাদার কোচিং, ফিটনেস ট্রেনিং, মনোবিদদের সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা দলটিকে করে তুলেছে কঠিন থেকে কঠিনতর প্রতিপক্ষের জন্যও ভয়ংকর।দেশের তরুণীরা এখন শুধু বই আর ক্যারিয়ারের চিন্তায় সীমাবদ্ধ নয়। তারা ক্রিকেট মাঠেও স্বপ্ন বুনছে, সেই স্বপ্নকে রঙ দিচ্ছে ঘাম আর সাহসে।
গ্যালারির ঢেউ ও গর্বের কান্না
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এক একটি রান, এক একটি আউট যেন ছিল জাতির হৃদয়ের স্পন্দন। গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণী দর্শক চোখ মুছতে মুছতে বলেন, "আজ যেন আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হলো। মেয়েরা আমাদের মাথা উঁচু করল।" এ অনুভূতি একা তার নয়, এ অনুভূতি বাংলাদেশের কোটি ক্রীড়াপ্রেমীর, এক সত্ত্বার জয়।
এই জয় শুধু খেলার নয়, মননেরও
আজ যারা মাঠে দাঁড়িয়ে দেশকে জেতাল, তারা আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। এই জয় প্রমাণ করল, নারীরা শুধু জয় করতে জানে না, তারা নতুন ইতিহাস লেখার কলমও হাতে রাখে। ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদেরা যখন এই দিনের কথা লিখবেন, তারা বলবেন একদল সাহসী নারী ক্রিকেটার ভারতকে হারিয়ে শুধু ম্যাচ জেতেনি, তারা বাংলাদেশকে দেখিয়েছে, স্বপ্ন দেখা ও অর্জন করা দুই-ই সম্ভব।