দেশের স্বাস্থ্যখাত আজ ভয়াবহ সংকটে, যেটা শুধু হাসপাতাল নয়
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ৩:৩৭:৪৪
দেশের স্বাস্থ্যখাত আজ ভয়াবহ সংকটে, যেটা শুধু হাসপাতাল নয়, পুরো সমাজকেই উদ্বিগ্ন করছে।
আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, প্রশাসনিক ত্রুটি ও জনসচেতনতার ঘাটতি মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অস্থির পরিস্থিতি।
“স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবনতি শুধু রোগীর মৃত্যু বাড়ায় না, দেশের অগ্রগতিকেও স্তব্ধ করে দেয়।”ডা. মারুফা আক্তার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ এক ভয়াবহ সংকটে পতিত, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনায় জর্জরিত। এই অবস্থা শুধু রোগীদের নয়, পুরো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
লোকাল গল্প: মমতার ব্যথার চিত্র
কুমিল্লার মমতা (৫৫) তার কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমার স্বামী হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন, হাসপাতালে বেড নেই, ওষুধ নেই। সাহায্যের জন্য কয়েকবার ফোন দিলাম, কেউ সাড়া দেয়নি।” তার গল্প দেশের অসংখ্য মানুষের দুরবস্থা তুলে ধরে।
ডাটা: সঙ্কটের সংখ্যা
- স্বাস্থ্যসেবায় প্রতি ১০০০ জনে ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র ০.৬, যা বিশ্বমানের তুলনায় এক চরম ঘাটতি।
- গত ৫ বছরে হাসপাতালের বেড সংখ্যা মাত্র ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রোগীর চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
- টিকা কার্যক্রম ও জরুরি সেবায় দেরি ও অনিয়ম বেড়েছে ৩০%।
আধুনিক প্রযুক্তির অভাব ও প্রশাসনিক ত্রুটি
বিশ্বে যেখানে ডিজিটাল হেলথ রেকর্ড, টেলিমেডিসিন ও AI চিকিৎসা প্রযুক্তি রোগীর জীবন বাঁচাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে এখনও এসব প্রযুক্তির প্রয়োগ সীমিত। তাছাড়া, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও কম জনবিজ্ঞতা স্বাস্থ্য সেবার মান কমিয়ে দিয়েছে।
সামাজিক প্রভাব
জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় অবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। অসংগঠিত তথ্য, গুজব ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে মানুষ অনেক সময় জরুরি চিকিৎসা নিতে দ্বিধা বোধ করে। এতে রোগের প্রকোপ বাড়ছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি গভীর হচ্ছে।
প্রশ্ন যা ভাবতে বাধ্য করে:
- কেন স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থা রোধে এখনো দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি?
- আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি কবে হবে?
- জনসচেতনতা বাড়াতে এবং স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বস্ত করতে কীভাবে কাজ করা উচিত?
- ভবিষ্যতে এই সংকট এড়াতে কি জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন হবে?
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ডাক্তার বৃদ্ধির ব্যাপার নয়, এটি দেশের সার্বিক উন্নতির মাপকাঠি। এখনই সময় দ্রুত, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ নেওয়ার—যাতে প্রতিটি মানুষ পায় সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা। যদি আমরা আজ অব্যবস্থাকে মেনে নিই, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দরজা খুলে দিবো। সুতরাং, শুধু প্রশ্ন করা নয়, এখন কাজ করার সময়। কারণ স্বাস্থ্যই জীবনের মূলধন, আর তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই দেশের অগ্রগতির একমাত্র পথ।