বিশ্বব্যাপী চামড়া শিল্পে চীন দখল করে প্রায় ৩০% বাজার। আর বাংলাদেশের অংশ মাত্র ০.৫% কিন্তু অজানা নয় সম্ভাবনা ও রয়েছে বিপুল চ্যালেঞ্জ।
প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০২৫, ১:২২:২০
বিশ্ববাজারের প্রবণতা ও প্রতিযোগিতা
চীন বর্তমানে বিশ্ব চামড়া শিল্পের এক নম্বর শক্তি। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশাল উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বৃদ্ধি করছে। তাদের শ্রমশক্তি ও সরকারের সাপোর্ট প্রোগ্রাম এই সফলতার অন্যতম কারণ। ইউরোপ ও আমেরিকায় চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা থাকলেও, সেখানে পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ কঠোর হওয়ায় উৎপাদন তুলনামূলক কম। বাংলাদেশের চামড়া শিল্প, যদিও বৈশ্বিক মান অর্জনে চেষ্টা করছে, তবে এখনও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও মান নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে রয়েছে। মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে উন্নত প্রশিক্ষণের অভাব এবং পরিবেশগত বাধা শিল্পকে টক্কর দেয়ার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের সামনে রয়েছে বেশ কিছু অন্তর্নিহিত সমস্যা। প্রথমত, অপর্যাপ্ত প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে যথেষ্ট প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। তৃতীয়ত, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজন।
চামড়া শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুজ্জামান বলেন, “আমাদের শিল্পে আধুনিকীকরণ জরুরি, না হলে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকা কঠিন হবে।”
তবে, বাংলাদেশের চামড়া শিল্প এখনও সম্ভাবনার জায়গা বহুল রাখে। দেশীয় কাঁচামাল সহজলভ্যতা, দক্ষ শ্রমশক্তি এবং সরকারিভাবে শিল্প উন্নয়নে উৎসাহ যেমন আছে, তেমনই বেসরকারি উদ্যোগও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে নজর দিলে বিশ্ববাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব। বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব চামড়া তৈরির প্রবণতা বাড়ায়, বাংলাদেশের জন্য ‘সবুজ প্রযুক্তি’ গ্রহণ ও পরিচ্ছন্ন উৎপাদন পদ্ধতি শিল্পের ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করতে পারে। এছাড়াও নতুন বাজার আবিষ্কারের মাধ্যমে রপ্তানি সম্ভাবনা প্রসারিত করা যেতে পারে।
জার্মানির চামড়া শিল্প আধুনিক প্রযুক্তি ও কঠোর গুণগত মানের জন্য বিশ্বখ্যাত। তাদের থেকে শিখতে হবে পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া ও শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পন্থা। বিশেষজ্ঞ ড. মারিয়া শুলজ বলেন, “বাংলাদেশকে জার্মানির মতো প্রযুক্তিগত আধুনিকতা এবং কর্মী প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তা ছাড়া বৈশ্বিক মান রক্ষায় মান নিয়ন্ত্রণও অত্যাবশ্যক।”
“বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে, যদি প্রযুক্তি ও পরিবেশ মেনে উন্নয়ন করা হয়।” রফিকুজ্জামান, চামড়া শিল্প মালিক সমিতি
বিশ্ব চামড়া শিল্পের বর্তমান চিত্র
শেষ কথা:
বিশ্ব চামড়া শিল্পে বাংলাদেশের সামান্য অংশীদারিত্বের পেছনে রয়েছে প্রযুক্তিগত ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে এই শিল্প নতুন করে জেগে উঠতে পারে। সময় এসেছে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের সঠিক পরিচয় দেওয়ার একটি সম্ভাবনার গল্প শুরু করার।