প্রাণিকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন গলছে বরফ, হারিয়ে যাচ্ছে বাস্তুতন্ত্রে
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৫:১৬:৫৯
প্রাণিকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন গলছে বরফ, হারিয়ে যাচ্ছে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য
হিমবাহ কেবল বরফের স্তূপ নয় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে হিমবাহ গলার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে হিমাঞ্চলনির্ভর অগণিত প্রাণী। এই প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব যেমন বিপন্ন, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য।
গলছে হিমবাহ, মরছে প্রজাতি
একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুসারে, হিমাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রায় ১০০০টির বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বরফনির্ভর আবাসস্থানে বসবাস করে। যেমন:
- স্নো লেপার্ড
- পেঙ্গুইন
- আর্কটিক ফক্স
- আইস ওয়র্ম ও গ্লেসিয়াল ব্যাকটেরিয়া
- হিমবাহ নদীর ট্রাউট মাছ
গবেষণা বলছে, বর্তমান গতিতে হিমবাহ গলা অব্যাহত থাকলে, ২১০০ সালের মধ্যে ৬০%-৭০% হিমাঞ্চলনির্ভর প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
জীববৈচিত্র্য হারালে কী হবে?
ড. মুনতাসির আহমেদ, আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা সংস্থার ফেলো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক অধ্যাপক বলেন "হিমবাহভিত্তিক প্রাণী কেবল নিজেদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এরা সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এই প্রাণীদের বিলুপ্তি মানেই পরবর্তী স্তরে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়া, যা মানুষের জীবন ও কৃষিকেও প্রভাবিত করবে।" তিনি আরও বলেন, "গ্লেসিয়াল ব্যাকটেরিয়ার বিলুপ্তি হলে পানির প্রাকৃতিক বিশুদ্ধিকরণ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে, যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে।"
আর্কটিক অঞ্চলে বিপর্যয় ত্বরান্বিত
আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকায় আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের কারণে পেঙ্গুইন, ওয়ালরাস, সিল ও হিমবাহজ প্রাণীরা প্রজনন, খাদ্যসংগ্রহ এবং চলাচলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক অঞ্চল থেকে তারা পুরোপুরি উধাও হয়ে যাচ্ছে। WWF জানিয়েছে, "আর্কটিক ফক্স" এর বর্তমান প্রজনন হার প্রায় ৪০% কমে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার নদীজ প্রাণীও ঝুঁকিতে
হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহ গলার ফলে উৎপন্ন নদীগুলোতে পানির গতি, তাপমাত্রা ও রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হচ্ছে। এর ফলে ট্রাউট মাছ, স্যালমনের মতো ঠান্ডা পানির মাছগুলো এখন আর টিকতে পারছে না। পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষি-জীবন ও স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবনধারা তীব্র পরিবর্তনের মুখে।
জলবায়ু ধসে আসছে বিপর্যয়: শুধুই সময়ের অপেক্ষা
জীববৈচিত্র্যের এই অবক্ষয় শুধুমাত্র একটি অঞ্চলের নয় এটি গোটা পৃথিবীর জন্য হুমকি। প্রাণীর বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যচক্রে যে ধস নেমে আসছে, তা অচিরেই মানুষের জীবনেও পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে। হিমবাহের গলন মানেই কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নয় এটি প্রাণিজগতের জন্য এক মহামারির নাম। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতিতে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, নইলে পরবর্তী প্রজন্ম এমন এক পৃথিবী পাবে যেখানে বরফ নেই, আর নেই হিমনদী প্রাণীর অস্তিত্ব।