বিশ্বের শতাধিক উপকূলীয় শহর হুমকির মুখে হিমবাহ গলার প্রভাব সরাসরি
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৫:০১:২২
বিশ্বের শতাধিক উপকূলীয় শহর হুমকির মুখে হিমবাহ গলার প্রভাব সরাসরি সমুদ্রপৃষ্ঠে
বিশেষ প্রতিবেদন:
বিশ্বের হিমবাহগুলো গলে যাওয়ার বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতাধিক শহর আংশিক বা পুরোপুরি পানির নিচে চলে যেতে পারে এমনই ভয়াবহ পূর্বাভাস দিচ্ছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো, এই শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক, মিয়ামি, সাংহাই, হো চি মিন, ব্যাংকক ও জাকার্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ মেগাসিটি।
শত শহরের মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরের আশঙ্কা
Climate Central এবং NASA-র যৌথ গবেষণায় বলা হয়, যদি বর্তমান হারে কার্বন নিঃসরণ চলতে থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঘরহারা হবে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে ১.১ মিটার পর্যন্ত, যা বিশ্ব উপকূলীয় এলাকাগুলোকে স্থায়ী বন্যার মুখে ঠেলে দেবে।
কোন কোন শহর সবচেয়ে ঝুঁকিতে?
- এশিয়া: ঢাকা, কলকাতা, ব্যাংকক, হো চি মিন, ম্যানিলা
- উত্তর আমেরিকা: নিউইয়র্ক, মিয়ামি, নিউ অরলিন্স
- ইউরোপ: ভেনিস, রটারডাম
- আফ্রিকা ও প্রশান্ত অঞ্চল: লাগোস, জাকার্তা, মানিলা
ঢাকার কি হবে?
বাংলাদেশের পরিবেশবিদ ও IPCC সহযোগী গবেষক ড. আফরোজা সাবরিনা জানান "ঢাকা সরাসরি উপকূলে না হলেও এর চারপাশের নদী ব্যবস্থা জলাবদ্ধতা ও প্লাবনের মাধ্যমে রাজধানীকেও অকার্যকর করে তুলতে পারে। শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি হুমকির মুখে পড়বে ২০৫০-এর মধ্যে।" তিনি আরও বলেন, "পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ২.৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ঢাকায় আশ্রয় নিতে চাইবে, যা নগরের ওপর আরও বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে।"
সাগর যখন গ্রাস করবে শহর
Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) জানায়, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহ গলা বিশ্ব সমুদ্রের পানির স্তর বাড়ানোর মূল কারণ। ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে আসে, প্রতি বছর গড়ে ৩৫৮ গিগাটন বরফ গলে যাচ্ছে শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ড থেকে।
সমাধান কোথায়?
বিশ্বনেতারা একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন শ্লথ। COP28 সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা ও নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝোঁকার কথা বলা হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতি কমাতে হলে এখনই বৈশ্বিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—বিশেষ করে কার্বন নিঃসরণ কমানো, বনাঞ্চল সংরক্ষণ, ও সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো। এই গলন আর থামছে না। পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ, ঘনবসতিপূর্ণ ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো যদি ডুবে যায়, তবে শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় হবে সীমাহীন। এখনো সময় আছে, কিন্তু তা দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে।