জলবায়ু সংকটে নতুন মাত্রা: বরফ হারাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড ও হিমালয়
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৪:৫২:৩৭
জলবায়ু সংকটে নতুন মাত্রা: বরফ হারাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড ও হিমালয়, ঝুঁকিতে বিশ্ববাসী
বিশেষ প্রতিবেদন:
গত এক দশকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে অপ্রত্যাশিত হারে, যার সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রভাব পড়েছে হিমবাহগুলোর ওপর। বিশ্বের বহু পুরনো বরফশৃঙ্গ এখন প্রতিনিয়ত গলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত ৫ হাজার বছরের মধ্যে এখনই হিমবাহ গলার হার সবচেয়ে বেশি। এই গতি বজায় থাকলে, মানবসভ্যতার জন্য এটি এক ভয়াবহ বিপর্যয় হয়ে উঠবে।
IPCC-এর অ্যালার্মিং প্রতিবেদন
আন্তর্জাতিক জলবায়ু সংস্থা IPCC-এর ২০২3 সালের ষষ্ঠ মূল্যায়ন রিপোর্ট অনুযায়ী, হিমবাহ গলার বর্তমান হার আগের তুলনায় ৩০% বেশি। প্রতি বছর প্রায় ২৭০ বিলিয়ন টন বরফ গলে যাচ্ছে বিশ্বের হিমবাহগুলো থেকে। বিশেষত, গ্রিনল্যান্ড, আল্পস, হিমালয় ও অ্যান্টার্কটিকায় এই গতি ক্রমবর্ধমান।
বিজ্ঞানীরা কেন এতটা চিন্তিত?
- সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়ছে: প্রতিনিয়ত গলে যাওয়া বরফ সরাসরি গিয়ে পড়ছে মহাসাগরে, যা বছরে প্রায় ৩.৫ মিমি করে সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়াচ্ছে।
- পানির উৎস বিপন্ন: হিমালয়ের হিমবাহ গলা মানে ভারতের গঙ্গা, বাংলাদেশের পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের পানির উৎস হুমকির মুখে পড়া।
- পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট: হিমবাহের সঙ্গে যুক্ত ছিলো দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, যা হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য ইঙ্গিত কী?
বিজ্ঞানী ড. মোহাইমিন হোসেন বলছেন, "বাংলাদেশ একটি জলনির্ভর দেশ। হিমবাহ গলার ফলে যদি নদীগুলোর পানিপ্রবাহ ব্যাহত হয়, তবে কৃষি, মাছচাষ ও পানের জোগান বিপর্যস্ত হবে।" তিনি আরও বলেন, "সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির কারণে আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।"
কারা দায়ী?
বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে শীর্ষে থাকা দেশগুলো যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া তাদের ওপর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে সবচেয়ে বেশি ভুগছে আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো।
পরিবর্তনের সম্ভাবনা কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব শিল্পনীতি, কার্বন কর ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে গতি কমানো সম্ভব। তবে তার জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বৈশ্বিক সহমর্মিতা। হিমবাহ গলার এই রেকর্ড গতি বিশ্ব জলবায়ু নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি জাগরণী বার্তা। বিজ্ঞানীরা চিন্তিত, কারণ পৃথিবী দ্রুতই এক অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশগত ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে যার দায় মানুষকেই নিতে হবে।