হিমবাহ গলনের ভয়াবহ গতি বাড়াচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ, জলবায়ু
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৪:৪৮:১৯
হিমবাহ গলনের ভয়াবহ গতি বাড়াচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ, জলবায়ু উদ্বাস্তু ও খাদ্যসংকটের আশঙ্কা তীব্র
বিশেষ প্রতিবেদন:
পৃথিবীর দীর্ঘদিনের প্রাকৃতিক তাপ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, হিমবাহ বা গ্লেশিয়ারগুলো আর নিরাপদ নেই। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা আজ চিন্তিত কারণ বরফে ঢাকা পাহাড়গুলো গলে যাচ্ছে রেকর্ড গতিতে। এই গলন শুধু পাহাড় বা পর্বতের আকৃতি পাল্টে দিচ্ছে না, বরং বদলে দিচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি এবং লাখো মানুষের জীবনধারা।
৩ দশকে হারিয়ে গেছে ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ
Leeds University-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ গলে গেছে। এটি যদি সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে পুরো ব্রিটেনকে ১০০ মিটার গভীর বরফে ঢেকে দেওয়া সম্ভব।
গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার সংকট:
NASA ও ESA-এর উপাত্ত অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডে প্রতিদিন গলে যাচ্ছে প্রায় ৮ বিলিয়ন টন বরফ, এবং অ্যান্টার্কটিকায় বছরে হারিয়ে যাচ্ছে গড়ে ১৫০ গিগাটন বরফ। এই প্রবণতা বজায় থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ বেড়ে যাবে ১.১ মিটার পর্যন্ত, যা বাংলাদেশসহ উপকূলীয় ১০০টিরও বেশি শহরের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলবে।
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি বাড়ছে:
বুয়েটের পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের গবেষক ড. শামীমা ইয়াসমিন বলেন "বাংলাদেশ এমনিতেই নিচু দেশ, আর এই হিমবাহ গলার ফলে নদীগুলোর প্রবাহপ্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। সেচের পানির অভাব হবে, চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হবে, এমনকি শহরেও দেখা দেবে পানির সংকট।" তিনি আরও যোগ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের দেশে বছরে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।
জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব:
হিমবাহ গলার ফলে হিমাঞ্চল নির্ভর প্রাণী যেমন স্নো লেপার্ড, পেঙ্গুইন, আর্কটিক ফক্সের বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যের এই ধ্বংসাবশেষ ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ইকোসিস্টেমে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট হিমবাহের নীরব বিস্ফোরণ:
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (GLOF) নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে। হিমবাহ গলে সৃষ্ট জলাধার হঠাৎ ফেটে গিয়ে বিশাল বন্যা নামিয়ে আনছে হিমালয় ঘেঁষা অঞ্চলে। ২০২৩ সালে ভুটানে এমন একটি ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৪০ জনের।
বিশ্বজুড়ে চাপ: উন্নয়ন বনাম পরিবেশ
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অগ্রহণযোগ্য হারে কার্বন নিঃসরণ করছে, যা হিমবাহ গলার গতি আরও বাড়াচ্ছে। জলবায়ু চুক্তি বা COP সম্মেলনে অনেক দেশ প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি রয়েছে। দিনে দিনে গলে যাওয়া এই বরফের পাহাড়গুলো কেবল পরিবেশের জন্যই নয়, মানুষের অস্তিত্বের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এখনই সময় বৈশ্বিকভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকে যাওয়া এবং জলবায়ু ন্যায্যতার ভিত্তিতে উন্নয়ন চিন্তা করার।