বায়ু দূষণে ঢাকার অবস্থান ক্রমেই শীর্ষের দিকে।
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৪:৪৩:২৯
বায়ু দূষণে ঢাকার অবস্থান ক্রমেই শীর্ষের দিকে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে সহনীয় সীমা প্রতিদিনের নিঃশ্বাসে যোগ হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জলবায়ু বিপদের বার্তা।
বাতাসে শ্বাস নয়, বিষ!
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বায়ু মান পরিমাপক সংস্থা IQAir জানায় ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক বায়ুদূষণপ্রবণ শহর হিসেবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে PM2.5 ও CO₂ এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত মানের প্রায় ৬ থেকে ৮ গুণ বেশি। গবেষণা বলছে, শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইডই নয়, ঢাকার বাতাসে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড, ব্ল্যাক কার্বন ও ওজোন গ্যাসের উচ্চ উপস্থিতি।
ঢাকার বাতাসে কার্বনের মাত্রা: পরিসংখ্যান যা আতঙ্কের
- কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂): শহরের কেন্দ্রে দিনে গড়ে ৪৫০–৫০০ পিপিএম (parts per million) WHO নির্ধারিত সহনীয় সীমা: ৩৫০–৪০০ পিপিএম
- কার্বন মনোক্সাইড (CO): যানবাহন চলাচল বেশি এমন এলাকাগুলোতে গড়ে ৫–৭ পিপিএম, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির সীমার কাছাকাছি।
- ব্ল্যাক কার্বন: বিশেষত পুরনো ডিজেলচালিত যানবাহন ও ইটভাটা থেকে নির্গত হচ্ছে উচ্চমাত্রায়, যার উষ্ণায়ন ক্ষমতা CO₂-এর চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি।
মূল উৎস কী কী?
1. যানবাহন: ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন চলে প্রায় ১৫ লক্ষ যানবাহন, যার মধ্যে ৬০% পুরনো ও দূষণ নিয়ন্ত্রণবিহীন। ডিজেলচালিত বাস ও লেগুনা থেকে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ CO ও CO₂।
2. ইটভাটা: শহর ও উপশহর ঘিরে আছে প্রায় ২,৫০০ ইটভাটা, যাদের অনেকগুলো এখনো কয়লা ও কাঠচালিত। প্রতিবছর শুধুমাত্র ইটভাটা থেকেই গড়ে ৮.৫ মিলিয়ন টন CO₂ নির্গত হয়।
3. নির্মাণকাজ ও ধুলা: নির্মাণ এলাকায় ভারী যান, জেনারেটর ও ধুলাবালির কারণে বাতাসে কার্বন কণার ঘনত্ব বাড়ে।
4. জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ ও রান্না: গৃহস্থালি পর্যায়ে এখনো ব্যাপক হারে কয়লা, কাঠ ও গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে।
ড. মোজাম্মেল হক, পরিবেশ ও বায়ুমান বিশ্লেষক বলেন: “ঢাকার বায়ুতে কার্বনের ঘনত্ব কেবল পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ হুমকি। গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্কদের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক।” তিনি আরও বলেন, “এই দূষণ এখন আর শুধুই পরিবেশগত সমস্যা নয় এটি অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও জীবনমানের চূড়ান্ত সংকট।”
এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ?
- শিশুদের নিউমোনিয়া ও হাঁপানির প্রকোপ বাড়ছে
- বয়স্কদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়েছে ৩২%
- স্কুলজীবী শিক্ষার্থীদের ফুসফুসের সক্ষমতা ১৫% পর্যন্ত কমে যেতে পারে
- কর্মজীবী মানুষের উৎপাদনশীলতা কমছে, ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়ছে
সমাধানের দিকনির্দেশনা
- পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধ ও ই-ভেহিকেলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা
- ইটভাটায় জিগজ্যাগ প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাধ্যবাধকতা
- নগর পরিকল্পনায় সবুজ বাফার জোন, ছাদবাগান ও শহর-জঙ্গল বৃদ্ধি
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে বায়ু পরিশোধক স্থাপন
- এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) রিয়েলটাইম মনিটরিং ও পাবলিক ওয়্যার্নিং সিস্টেম চালু