ভারতের আইনি ইতিহাসের আলোচিত মামলা নিয়ে নতুন কাহিনি ‘শাহ বানো’ মামলার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হচ্ছে সুপর্ণ বর্মার সিনেমা ‘হক’।
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৯:৪০
জনপ্রিয় দুই তারকা ইয়ামি গৌতম ও ইমরান হাশমি প্রথমবার একসঙ্গে আসছেন ‘হক’ ছবিতে। ছবির কেন্দ্রীয় কাহিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারতের আইনি ইতিহাসের এক আলোচিত অধ্যায় ‘শাহ বানো মামলা’। ১৯৮৫ সালের এই মামলাকে কেবল একটি আইনগত বিতর্ক নয়, বরং নারী অধিকার ও ধর্মীয় প্রথার সংঘাতের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়।
শাহ বানো ছিলেন ৬২ বছরের এক নারী, যিনি বিবাহবিচ্ছেদের পর ভরণপোষণের দাবিতে আদালতে যান। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাঁর পক্ষে রায় দিলেও, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চাপে সেই রায় বদলে যায়। এই ঘটনাই তোলপাড় করে দিয়েছিল ভারতীয় সমাজকে। সেই বাস্তব ঘটনা নিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘হক’, যা কেবল একটি আদালতের লড়াই নয়, বরং নারী ন্যায়বিচারের সংগ্রামকে তুলে ধরবে। পরিচালক সুপর্ণ বর্মা, যিনি ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান ২’–এর জন্য আলোচিত হয়েছিলেন, বলেন “এই সিনেমা শুধু আইন নয়, মানুষের নৈতিক অবস্থানকেও প্রশ্ন করবে।” ইমরান হাশমি এবার থাকছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে। সাধারণত রোমান্টিক ও থ্রিলার চরিত্রে অভ্যস্ত এই অভিনেতা এবার হাজির হবেন এক গম্ভীর ভূমিকায়। অন্যদিকে ইয়ামি গৌতম, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে ‘আ থার্সডে’ ও ‘বালা’ ছবিতে নিজের অভিনয়দক্ষতায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন, থাকছেন এই সিনেমার কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে। তাঁদের নতুন রসায়ন ছবিটিকে ভিন্ন মাত্রা দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা আখতার বলেন, “শাহ বানো মামলা কেবল ভারতের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার নারী অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা। ‘হক’ যদি সংবেদনশীল বাস্তবতাকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারে, তবে এটি কেবল একটি সিনেমা নয়, সামাজিক দলিল হয়ে থাকবে।” বিশ্ব চলচ্চিত্রে যেমন ‘এরিন ব্রকোভিচ’ কিংবা ‘12 Angry Men’ আদালত ও ন্যায়বিচারের গল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল, অনেকেই আশা করছেন ‘হক’ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে তার সমকক্ষ হয়ে উঠবে। আজকের দর্শক শুধু বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখেন না, তাঁরা সমাজ বাস্তবতার প্রতিফলনও খুঁজে ফেরেন। ধর্মীয় প্রথা বনাম মানবাধিকার এই সংঘাতকে বড় পর্দায় দেখতে আগ্রহী দর্শকেরা ইতিমধ্যেই ‘হক’ ঘিরে আলোচনায় মেতেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, সিনেমাটি মুক্তি পেলে নতুন প্রজন্ম আবারও শাহ বানো মামলার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পারবে।
“শাহ বানো মামলা কেবল আদালতের গল্প নয়, এটি ছিল নারী অধিকার বনাম সামাজিক প্রথার এক প্রতীকী সংঘাত।”
ভারতে নারী অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে এখনো বিস্তর বিতর্ক চলছে। সেই প্রেক্ষাপটে ‘হক’ হয়ে উঠতে পারে নতুন আলাপের সূত্র। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার দর্শকের জন্য ছবিটি এক অনন্য আকর্ষণ। বিশেষ করে নারী দর্শকদের জন্য এটি হতে পারে এক প্রেরণার গল্প, যা তাঁদের আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করবে। শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত ‘হক’ শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং সমাজ, ইতিহাস ও নারীর সংগ্রামের এক নতুন কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে চলেছে। ইয়ামি গৌতম ও ইমরান হাশমির এই জুটি তাই ইতিমধ্যেই দর্শকের চোখে প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে।