আর্কটিক থেকে হিমালয় বিশ্বজুড়ে বরফের স্তর হারিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর গতি
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৫:১০:৫৬
আর্কটিক থেকে হিমালয় বিশ্বজুড়ে বরফের স্তর হারিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর গতিতে, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক শীতলীকরণ ব্যবস্থা
যে হিমবাহ একসময় পৃথিবীর প্রাকৃতিক তাপ নিয়ন্ত্রক ছিল, আজ সেই বরফভাণ্ডার নিজেই পরিণত হয়েছে জলবায়ু বিপর্যয়ের কেন্দ্রে। গ্রিনল্যান্ড, আর্কটিক, হিমালয়, আন্দিজ ও অ্যান্টার্কটিকার বিশাল হিমবাহগুলো আশঙ্কাজনক হারে গলে যাচ্ছে। জলবায়ুবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীর ‘কোল্ডস্টোর’ কার্যত ভেঙে পড়েছে।
তথ্য-উপাত্তে হিমবাহ গলার গতির ভয়াবহতা
- NASA ও ESA-এর গবেষণা বলছে, গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহগুলো বছরে গড়ে গলে যাচ্ছে ২৮৬ গিগাটন হারে।
- হিমালয়ে বিগত ৩০ বছরে হারিয়েছে প্রায় ৪০% বরফভান্ডার, যা দক্ষিণ এশিয়ার ১৭টি নদীর পানিপ্রবাহে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
- আর্কটিক অঞ্চলে ১৯৮০ সালের তুলনায় বরফের পরিমাণ এখন প্রায় ৭৫% কম।
বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন "Albedo Collapse" যেখানে বরফের প্রতিফলন ক্ষমতা কমে গিয়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠ আরও বেশি সূর্যতাপ শোষণ করছে। ফলে আবারও তাপমাত্রা বাড়ছে, এবং হিমবাহ গলার হার ত্বরান্বিত হচ্ছে এই পরস্পর-নির্ভর দুঃচক্রকেই বলা হয় Positive Feedback Loop।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভয়াবহ ভবিষ্যৎ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ ড. আফসানা কাদির জানান "হিমালয় থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীগুলো বাংলাদেশের কৃষি, পানিসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। হিমবাহ গলার ফলে এই প্রবাহ মৌসুমের বাইরে চলে যাচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে দেখা দিচ্ছে পানি সংকট, আবার বর্ষায় বাড়ছে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি।" তিনি বলেন, “আগামী ২০ বছরে শুধু পানি সংকট নয়, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা ও বাস্তুচ্যুত মানুষের চাপ বেড়ে যাবে বহুগুণে।”
জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে
হিমবাহ আশ্রিত জীববৈচিত্র্য যেমন স্নো লেপার্ড, পেঙ্গুইন, আর্কটিক ফক্স ও গ্লেসিয়াল ব্যাকটেরিয়ার জীবন আজ হুমকির মুখে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২১০০ সালের মধ্যে হিমবাহনির্ভর প্রজাতির ৬০% অবলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, যদি বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকে।
বিশ্ব রাজনীতির উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন
COP28 এবং আগের জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে বহু অঙ্গীকার এলেও বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কার্বন নির্গমন হ্রাস ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হলেও, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ন্যায়সংগত সমঝোতা অনুপস্থিত। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ঠান্ডা ভাণ্ডার হিমবাহ আর আগের মতো নেই। দ্রুততার সঙ্গে গলে যাওয়া এই বরফশৃঙ্গগুলো এখন জলবায়ু সংকটের গতি বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা, পানি সংকট, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস ও সামাজিক অস্থিরতা অনিবার্য হয়ে উঠবে। এই বার্তা শুধু বিজ্ঞানীদের নয় এটা গোটা মানবজাতির জন্য।